রোববার ২ নভেম্বর ২০২৫
১৮ কার্তিক ১৪৩২
রবিবাসরীয়...
প্রকাশ: রোববার, ২ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:৪০ এএম আপডেট: ০২.১১.২০২৫ ১:২৩ এএম |



রবিবাসরীয়...









ইসহাক সিদ্দিকীর কবিতা
 ফেরার গমনে মগ্ন
মনসুর হেলাল
রবিবাসরীয়...সত্তর দশকে আমাদের কাব্যে বস্তুবিশ্বচেতনা ও সত্তা দর্শনের চেয়ে জাতিগত ঘটনার প্রতিক্রিয়া অধিক সক্রিয়তা পায়Ñ আধুনিকের ক্ষয় হতাশা-শূন্যতায় বিচরণের চেয়ে নতুন ইতিহাস ঘটায়। কাব্য প্রকাশ হয়ে ওঠে বাঙময় ও উচ্ছ্বসিত। আর এ দশকের শেষপ্রান্তে কবি ইসহাক সিদ্দিকীর কাব্যভুবনে প্রবেশ। তার প্রাক-প্রস্তুতি, কাব্যচেতনা, ইতিহাসবোধ, ব্যক্তি ও জাতীয় দর্শন এবং তত্ত্ববিদ্যার উপলব্ধিকে করেছে গভীর ও মৌল জীবনবোধে স্থির।
সত্তরের সম্যকশক্তি ও তাৎপর্যময় উত্থান তার কবিতাকে দেয় শিল্পীত সুষমা। ব্যক্তি দর্শন তখন হয়ে ওঠে শিল্প সৃজনে সমৃদ্ধ। সত্তরের কাব্যাদর্শে জাতিসত্তার পরম মুখচ্ছবি অঙ্কনের যে রোমান্টিকতা মধ্যবিত্ত ব্যক্তি কবিকে করেছিল উল্লসিত ও বিস্তার প্রবণ, কিন্তু পরবর্তী দশকে এসে সে অবস্থানে তিনি আর ছিলেন না। গোটা নব্বই ও শূন্য দশকে আমরা তাকে পেয়েছি বিচ্ছিন্নভাবে। পরবর্তী দশকে আমাদের কবিতা বিজ্ঞান চিন্তার দ্বারা প্রবলভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। আত্মা, সৃষ্টি রহস্য, মৃত্যু ও ধ্বংস, বস্তুসত্তা ইত্যাদি বিষয় পরিত্যাগ করে স্বপ্ননিষ্ঠ হয় বিজ্ঞানভিত্তিক জীবনবাদে। তখন তাকে আমরা পাই এক আশ্চর্য বলয়ে। নিঃসঙ্গচারী এ চারণ তখন তার প্রকাশ ঘটায় ‘আমি সীমান্তবিহীন’ কাব্যগ্রন্থে। মুখ্যত এটিই তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ। পরাবাস্তবতার এক ইন্দ্রজালিক চাতুর্য ও নান্দনিকতার গভীর চেতনায় উত্থিত এ কাব্যে কবি ইসহাক সিদ্দিকী স্বকীয় কোনো কাব্যাদর্শ কিংবা শিল্পদর্শনের উন্মোচন করতে পারেননি, তবে ব্যক্তির মনন ও সার্বজনীন জীবনমান উন্মোচন করেছেন। তুলে এনেছেন গভীর দায় ও অন্তর্তাগিদ। যখন তিনি উচ্চারণ করেন :

কবিতা মাখানো খাতাগুলো ঝারমোছ করি নিশীথ/রজনী ধরে/তারপর শুতে যাই-ঝড়ো নক্ষত্র-জঙ্গল শিথানে আমার/পৈথানে গাঁয়ের কয়টি বিড়ালথাবা পাতে/কয়টিকে বাতি জ্বেলে আলোকিত করেনি মিলিত নক্ষত্ররা/(কবিতা মাখানো পাতাগুলো : আমি সীমান্তবিহীন)
নাগরিক ঝঞ্ঝাবর্তে আবর্ত কবি ইসহাক সিদ্দিকী প্রত্যক্ষ করেছেন বিগত প্রায় তিনটি দশকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ব্যাপক উত্থান-পতন। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দারিদ্র্য, অশিক্ষা ও লাগামহীন শ্রেণি বৈষম্য। পুঁজিবাদের কাছে ব্যাপকভাবে পরাস্থ বিজ্ঞান চিন্তা ও মুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি। সময়গতি এখানে দ্রুত হলেও স্থান জগৎ মন্থর ও অনুভূমিক। মানুষের জীবনযাপন এখানে বিচূর্ণ ও বিশৃঙ্খল। স্বপ্ন জগৎ অতিকল্পনার ধূম্রজালে আচ্ছন্ন। ফলে এই কবিও নিরন্তর খুঁজে বেড়িয়েছেন ব্যক্তির অস্তিত্ব, মানবিকতা ও ভাবাদর্শ। নিরেট বাস্তবতার এক প্রতীকী ব্যঞ্জনা দেখতে পাই কবির উল্লিখিত কবিতায়। তার কবিতার খাতাগুলো বারবার বিড়াল থাবায় ছিন্নভিন্ন হলেও তিনি সেই কুৎসিত থাবাকে নিরস্ত্র¿ করতে পেরেছেন তার শাব্দিক মারণাস্ত্রে। এটি বিপুল প্রত্যাশার এক হার্দিক উচ্চারণ, কারণ তিনি যখন বলেন :

বৃষ্টি ও বরফকুচি পেলে তারপর কবিতা লিখতে বসি /কবিতাগুলো ভিজেছে বহুদিন কাকটির ফিঙেটির ডালে /কবিতারা স্বাধীনতা প্রিয় নয় /হতো যদি চিহ্নের কাঁপুনি ছাড়িয়ে নিতাম /বরফের স্পর্শ থেকে/সেরকম পারিনি তাই/কবিতাকে নামতে দিই পাতালের দিকে/এতে পেয়ে যাই দরকারি যা যা/(বৃষ্টি ও বরফকুচি : আমি সীমান্তবিহীন)

কাব্য সৃষ্টিতে ব্যক্তি প্রতিভা ও তার সৃজনক্ষমতা পারিপার্শ্বিক যন্ত্রণার মতোই নিয়ন্ত্রিত; তবে আবশ্যিক কথন এই যে, ... সৃষ্ট নানান প্রতিবন্ধকতায় নান্দনিক ক্রিয়শীলতা কখনও স্তিমিত হয় না, এটি আপ্তÍবাক্য নয়; এটি সময়ের সাহসী উচ্চারণ। কারণ, সময় নিয়ন্ত্রিত হলে ব্যক্তির বিকাশ নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে। ইন্দ্রিয় সংবেদনের উপযোগিতা, রঙরূপ রেখা ও প্রকৃতির সঙ্গে ঘটে সৃষ্টির বিচ্ছেদ। এই বিচ্ছেদ কবি ইসহাক সিদ্দিকীর ছিল। কিন্তু এটি আত্মবিচ্ছেদ, নাকি সৃজনের অন্যপাঠ? এর ব্যাখ্যা ব্যক্তির পক্ষ থেকে না এলে একপক্ষ হয়ে পড়বে। ক্ষেত্রবিভাজনে তার স্বীকারোক্তি :

ছিচল্লিশ, এর ছি অংশটি দেখে স্পষ্ট মনে হলো/ভুল করে এসেছি এতদূর,/কথা ছিল আরও আগে অন্যভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর/(ছিচল্লিশ, এত বছর ভুল করে এসেছি : আমি সীমান্তবিহীন)

জীবনের কাছে, প্রকৃতির কাছে ঘুরে দাঁড়ানোর এমন আর্তি কবির আছে। এ যেন পর্বান্তরের এক ট্র্যাজিক বোধন। কারণ নাগরিক নিষ্পেষণ, বস্তুমুখী প্রতিযোগিতা ব্যক্তির জীবনকে প্রতি মুহূর্তে করে তোলে আতঙ্কগ্রস্ত, যা তার মৌল চেতনায় ব্যবচ্ছেদ ঘটায়। কিন্তু কবি এ ক্ষেত্রে নিজেকে দর্শন করেছেন অন্য প্রতিসরণে। তিনি দেখেছেন :

পর্দা সরে গেলে দেখি অন্য এক সূর্যাস্তের আয়োজনে/খোজাটির কাঁধে বেয়ে ক্রমে গলে পড়ছে /শাহজাদী ইচ্ছার উত্তাপে, ওর দেহান্তরী ঝাঁই দেখে/উদ্বিগ্ন সখীরা/আমি আর আমার কুকুর এ সময় বের হই মেঘে/কুকুরটি এদিক সেদিক আতঙ্কিত পালাতে চাইলে/আমি ওর শিকল ছাড়ি না/না পেরে শেষে ও আমার ছায়ার মধ্যে ক্রমেই বিলীন হয়/শিকল সমেত  /(পর্দা সরে গেলে : আমি সীমান্তবিহীন)

২০০৪ সালে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘আমি সীমান্তবিহীন’। যে কাব্যগ্রন্থে সমকালে কুটিল ব্যস্তবতার পর্দা ব্যবচ্ছেদ করে কবি দেখেছেন অন্য এক সূর্যাস্তের আয়োজন। যেখানে বোধের অন্তর্দীপনে প্রত্যয়ী হয়ে সামাজিক কুটিলতাকে কুকুরের প্রতীকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। অন্তদৃষ্টিকে উৎক্ষেপণ করেছেন বৈদ্বগ্ধ সচেতনতায়। ২০১১-এর একুশের বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘যেখানে রাখো পা’তে দেখি সেই অন্তর্দৃষ্টি ‘অন্তরীক্ষে পাতালে অতলে’ আমাদের ‘ঐকান্তিক প্রতীক্ষাগুলো লুণ্ঠিত করেছে। দিয়েছে ‘রক্ত ছোপ হাওয়ার দেয়ালে’। তার প্রিয় কবি আহসান হাবীব যুদ্ধ বিভীষিকা ও সামাজিক অবক্ষয়ের মধ্যে যেভাবে মানুষের জীবনযাত্রা প্রত্যক্ষ করেছিলেন, সেটিই সঠিকভাবে নিজের অনুভূতি দ্বারা বাস্তব রূপ দিয়েছিলেন কাব্যে। যেভাবে ক্ষয়িষ্ণু মধ্যবিত্ত শ্রেণিসত্তার বিপর্যয়ের নির্মম ছবি আহসান হাবীব তুলে ধরেছেন তার কাব্যে। তেমনি কবি ইসহাক সিদ্দিকীর কবিতায়ও পাই তার অনিবার্য চিত্র :

দুর্বোধ্য প্রত্নের ফুল শুনো/ধূর্ত চলাচল শুনো অবরুদ্ধ হাওয়া-/ক্রীতদাস আমি ক্রীতদাস/এর চেয়েও পুরনো শিকল/উচ্চাকাক্সক্ষা ছুঁবে না আমাকে/(বিষে মুখ রেখে : যেখানেই রাখো পা)

জীবনানন্দ, আহসান হাবীব ও আল মাহমুদের আবহমানতা ও ঐতিহ্যের সন্ধান আমরা পাই ইসহাক সিদ্দিকীর আলোচিত কাব্যে। যেমন :

সংহার ছুঁয়েছে আমাকে/অসামান্য স্পর্শের পালকে/মেঘ দেখো  ধাবমান সাদা মেঘ/শুয়ে আছি  দীর্ঘশ্বাস শবাধারে/(এপিটাপ : যেখানেই রাখো পা)/আবার ফিরছি আমি নৈঃসঙ্গের বলয়ে বলয়ে/আমাকে রাখেনি ধরে অন্ধ ভালোবাসা/ক্রুদ্ধ উপকূল।/মাধ্যাকর্ষ আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে/(আবার ফিরছি আমি নৈঃসঙ্গের বলয়ে বলয়ে : যেখানেই রাখো পা)

ওই তো ভোরের আজান, ওই তো ভোরের প্রথম আজান/হাওয়ায় গুমড়ে ফিরে/অথচ আমার ভ্রমণ তোমার অঙ্গুরীয় ঘিরে/আমার সাঁতার তোমার হীরকে গ্রীবায়/(সোমেশ্বরী : যেখানেই রাখো পা)

জীবনানন্দ, আহসান হাবীব ও আল মাহমুদের বহমানতাকে ধারণ করেই তিনি একটি স্বকীয় কাব্যভাষা নির্মাণ করেছেন, যা তাকে এবং তার কবিতাকে ঋদ্ধ করেছে। শিল্পমণ্ডিত করেছে এক অভিন্ন মৌলিকতায়। হয়ে উঠেছে সময়ের দুর্গমনীয় অভিযাত্রার প্রতিচ্ছবি। জীবনের আহরিত রস ও আনন্দ দু’দিক থেকেই ইসহাক সিদ্দিকীর কবিতায় প্রযুক্ত। অন্ধকারে নিঃসঙ্গ গমনে তিনি আলোর বিচ্ছুরণ ঘটিয়েছেন। সমসাময়িকদের সঙ্গে সমান্তরাল গতিতে ধাবমান হলেও তার গতি অবধারিত চেতনায় ঐশ্বর্যবাহী।
সমকাল ঋদ্ধ ও ভাবের লৌকিকতা যার কবিতাকে দিয়েছে অব্যর্থ সরণ। কিন্তু তার কবিতায় কেন শুনি মৃত্যু ও ফেরার কুশল? মৃত্যু, সে তো নিরুক্ত প্রস্থান! কিন্তু ফেরা; কোথায় ফিরতে চান সীমান্তবিহীন অনিঃশেষ অভিযাত্রার কবি ইসহাক সিদ্দিকী? কেন শুনি তার স্তম্ভিত উচ্চারণ :

আবার ফিরছি আমি নৈঃসঙ্গের বলয়ে বলয়ে/আমাকে রাখেনি ধরে অন্ধ ভালোবাসা/ক্রুদ্ধ উপকূল/মাধ্যাকর্ষ আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে/ফিরে যাই জুঁই /(আবার ফিরছি আমি নৈঃসঙ্গের বলয়ে বলয়ে : যেখানে রাখো পা)

বিষাদ ও বিপণ্নতার বৈরী বাস্তবতায় স্থানকালের বৃত্ত ভেঙে যেভাবে মানুষ ক্রমপ্রসার্য ও অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে, তাতে ব্যক্তি তার ক্ষুদ্র অবস্থান নিয়ে ক্রমেই নিজের প্রতি হয়ে উঠছে আণুবিক্ষণিক। মানবতা ও প্রগতির বাণী নিরর্থক করেনি, তবে নিঃসহায় ও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে উঠছে চিন্তার জগৎ। দেশ-কাল ও মুখে বস্তু প্রতিবেশের কিম্ভুত মুখোশ। এমন বাস্তবতা গ্লানিকর। যেখানে মানুষ এগোচ্ছে এক পরস্পরবিরোধী সত্তার নির্দেশিত পথে। দৃঢ়তার অšে¦ষণে যেখানেই মানুষ রাখুক তার পা। অবধারিতভাবে কিছু মৌলিক শঙ্কা তার ছায়াকে অনুসরণ করছে, যা থেকে তার মুক্তি নেই। এমন নিরিখে যখন উচ্চারিত হয় :

মানুষ ঠিকই আছে, মানুষের ভিতরের সে/মানুষ যেন শুধু নেই/যে কিনা দুঃখ পায়, কারো জন্য যে কিনা কাঁদে/যে কিনা পুড়ে অন্ধকারে  দূরের উনোনে/যে কিনা সাহস আনে  অহোরাত্রি-/বন্ধ দরোজায় কড়া নাড়ে  কথা বলে যায়/সে রকম কাউকেও যেনো/ আজকাল আমি দেখি না কোথাও/(মানুষ ঠিকই আছে : যেখানেই রাখো পা)

বিক্ষোভ-বিষাদ, পারিপার্শ্বিক সংকট, মনোজাগতিক দ্বন্দ্ব পারম্পর্য এক স্বাপ্নিক গন্তব্যে, কতটা নিরুদ্দিষ্ট হবে এই অনিঃশেষ যাত্রা! যেখানেই কবি ফিরতে চান, দেখতে চান মানুষের ভেতরের সেই মানুষ। তা কতটা পরিস্ফুট হবে তার প্রত্যক্ষ গোচরে? তবে ‘হংস হংসীর বন্ধন/সরোবরে বাহু বন্ধন নীল পদ্ম কোড়কে/সিংহ সিংহী, মেঘ আর মেঘ, মেঘের গর্জন/গন্ধগোকূল’ এসব যতই তিনি আচ্ছাদিত করতে চান হীরকে গ্রীবায়। যতই ফিরতে চান ভূগোলের অন্তরালে, যেখানে নারীর নিঃশ্বাস চোখে মুখে লাগে। বুকে লেগে থাকে ক্লান্ত শিশুর শরীর। অতএব কোথায় ফিরবে তুমি? যেখানেই রাখো পা ‘কবি এর স্পর্শ কিছু পাবে’।


কিছু কুয়াশা কিছু শিশির 

ফরিদ মুজহার ।।

কিছু কুয়াশা কিছু শিশির
কিছু হীমেল আসছে
হেমন্ত তার বুক পকেটে
সেই চিঠিটা রাখছে

কিছু আরতি কিছু নিবেদন
আনত মন নৈবেদ্য 
কিছু শেফালী উচাটন মন
নূপুর নৃত্যে অনুরুদ্ধ 

চিঠির ভাষায় কাব্য কবিতা
আর কিছুু কি থাকবে
ভালোবাসার শুকনো বকুল
তুমি কি কাছে থাকবে


স্বপ্ন

সাইয়িদ মাহমুদ পারভেজ।।

জোছনারা হারিয়ে গেছে অভিমান নিয়ে,
শতাব্দীর পর শতাব্দীর প্রতীক্ষা অগোছালো;
অনেক ইতিহাস লেখা হয়েছে মহেঞ্জোদারো,
হরপ্পা, ময়নামতি নিয়ে ;
অভিমান ছুটে যায় নিজেকে অজান্তে হারিয়ে।
নাফাখুমের স্রোত হারমানে চোখের জলে,
বুনোহাঁস হারিয়ে ফেলে দিক দুর্গম পাহাড়ি পথে;
নীড় সে খোঁজে না আর পাতা মোড়ানো ছায়াতলে;
স্বপ্নের সীলমোহর উড়েগেছে ভিনগ্রহের রথে।
ক্ষণিকের জীবন,তাও এলোমেলো, যুদ্ধ সারাবেলা:
কখনো জীবন, কখনো ক্লিষ্টতা, কখনো প্রিয়তমা।
দাবানল তাই যখন তখন হৃদয়ে ভাসায় ভেলা
তার সাথে আর হবে না দেখা,
হবে না কথা চোখে চোখ রেখে; দুঃখ আছে জমা।
বুনোহাঁস ছুটে দিকহারা পথে নিজেকে হারিয়ে,
কাঁদে একাকী ব্যথার অরণ্য দ্বিগুণ হয়ে উঠে ;
ইতিহাস তাকে খোঁজে পাবে না,তা গেছে ছাড়িয়ে,
মজনুরা তো এভাবেই মরে, স্বপ্ন যায় টুটে।


তিনশ গুলির শিশু

আহাম্মেদ কবীর।।

তখনো আকাশে উড়ে শান্তির কপোত
মানবতা ক্ষুণ্ন হলে শুরু হয় – হইচই, উতলা তাণ্ডব
মানুষ যুদ্ধের পক্ষে নেই, হিংসা বুলে শুধু প্রেম, ভালোবাসা
আমাদের আকাশেরা রোহিঙ্গা নীলের নতজানু
তবুও শান্তির ইচ্ছে,সকালের শুভ্য শিশির সবুজে
কিন্তু গুলি কেন? এক নয় একাধিক, বর্ষার-বৃষ্টির মতো!

কোথায় সে গুলি চলে? বোমাবাজি শব্দের হুংকারে

আমিতো দেখিনি সেইসব হত্যাযজ্ঞ, আগ্রসন
তবু বুঝি ওরা হলো আগ্রাসী হায়েনা...
বুঝিনা অবুঝ আমি, কালো কালো ভয় কাঁদে একা
গুলি এসে হত্যা করে মানুষের বসবাস, গাজা’র অন্তরে
এক নয় একাধিক গুলি ছুটে আসে ছোট ছোট শিশুদের দিকে।
একটি শিশুর কথা যদি বলি তুমি ভয় পাবে
গুলি এসে তাকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়
পরিশেষে জাতিসংঘ হিসেবের খাতায় লিখলোÑ
শিশুটির সারা দেহে গুলির আঘাত
শিশুটিকি ফিলিস্তিন, মুক্তিকামী স্বাধীনতা?
তিনশ গুলির শিশু, কোন ঠাট্টা নয়, বাস্তবতা
বেঁচে আছে মানবতা, এভাবে হয়তো
তবে কতদিন? কত রাত অপেক্ষা করবে সেই
তিনশ গুলির শিশু?
ইজরাইল নয়তো সেই ইস্রফিলেরই বাঁশি...


"একটি গ্রামে "

আরিফ আজগর ।।

একটি বিকেল সন্ধ্যা হলে
একটি রাত ভোর,
একটি গাঁয়ে জমে পাখির
কিচিরমিচির শোর। 

একটি খালের দুই পাড়েতে
দুইটি বিশাল মাঠ,
একটি আকাশ মাতায় সেথায়
মেঘের ঘনঘাট। 

একটি সূর্য আলো ছড়ায়
গড়ে সুঠাম দিন,
একটি চাঁদ জোৎস্না বিলায়
রাতের সম্মুখীন। 

অনেক ফড়িং নাচতে থাকে
শত ধানের শীষে,
ডিঙি ডিঙি নৌকা চলে
বিলের অহর্নিশে। 

একটি সবুজ আভায় জুটে
অনেক হৃদয় দম,
একটি গ্রামেই মিলবে শত
বাঁচার উপক্রম।



তুমি বিরহ না

আমিনুল ইসলাম 

আমি তোমারে চেয়েছি গো ফুলের পরে,সবুজ ঘাস কিংবা মাঠের তরে,
জ্যোৎস্নার কোলে,খোলা আকাশের নিচে। আমি তোমারে চেয়েছি পাখি,
ভিড়ের ত্রিসীমায় সন্ধ্যেবেলা,নিঝুম 
রাত কিংবা অপরাহ্ন নির্জনতায়।
তোমারে চেয়েছি আমি মসজিদ,র্গীজা প্যাগোডায়,ফুটপাত কিংবা বেলকনি তে,ভোরের শিশির,অথবা শিশুর গালের মতো সকালের কোমল 
রোদের ভেতর।অথচ তোমারে দেখেছি সোনামুখ,জীবনানন্দ,কিংবা হেলাল হাফিজের কবিতার ভেতর।


ঔরস

সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া ।।


চিন্তায়-
উত্তর না জানা প্রশ্নেরা ভীড় করে।

তবে...
এটুকু বুঝি,
আলাদা হয়ে গেলে চূর্ণ হয় আদর্শ।

কুকুরে কামড়ানো রাস্তা বরাবরই অমসৃণ।

অদলবদল খেলায়-
আদর্শ বিচ্যুত সবাই নিহত হয়।

তাঁরা মনে করেন, 'এইতো আছি বেশ'!
কিন্তু...
আশ্চর্য রকম ভাবে
তাঁরা অনেক আগেই হয়ে যায় শেষ।

লোভী নেতা কখনো
পড়তে পারেন না মানুষের মন,
দেখতে পান না জাতির মুখের রেখা।

আদর্শে দুর্দান্ত না হলে,
পথে স্বাভাবিকতা থাকে না।
স্খলিত নক্ষত্র আকাশ খুঁজে পায় না।

সংস্কৃতিতে-
নির্মলতা না থাকলে,
ঘাম এবং দুর্গন্ধে কখনো
থাকে না সবুজ সতেজ নিঃশ্বাস।

সাম্যবাদ বলো কিংবা অন্য...
আদর্শ হলো কঠিন এক বিশ্বাস।

ঔরস অস্বীকার করলে,
মানুষের পরিচয় থাকে না।












http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
নির্বাচনের বিকল্প নেই
মনগড়া সংস্কার প্রস্তাব জাতির জন্য একটি অশনি সংকেত
কুমিল্লায় সমবায় দিবস পালিত
আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুব মজুমদার রকেট গ্রেফতার
মহাসড়কে ঝটিকা মিছিল দেবিদ্বারে আওয়ামী লীগের ১৩ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুব মজুমদার রকেট গ্রেফতার
নির্বাচনের বিকল্প নেই
গণভোট না হলে নির্বাচন অর্থহীন : জামায়াত আমির
মনগড়া সংস্কার প্রস্তাব জাতির জন্য একটি অশনি সংকেত
কুমিল্লায় সমবায় দিবস পালিত
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২