তানভীর দিপু।।
এইচএসসিতে
সারাদেশে সবচেয়ে কম পাশের হার কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে। জিপিএ ৫ পেয়েছে
মাত্র ২৭০৭ জন। কঠোরভাবে পরীক্ষার খাতা নিরীক্ষণ এবং কয়েকটি বিষয়ে
প্রশ্নপত্র জটিল হওয়াকে পাশের হার কম হওয়ার কারণ বলছে শিক্ষার্থীরা। তবে
তলানিতে থাকা ৪৮.৮৬ শতাংশ পাশের হারকে প্রকৃত ফলাফল বলছে বোর্ড।
এবারের
পরীক্ষায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ছয়টি জেলা থেকে অংশগ্রহণ করে ৯৯ হাজার
৫৭৬ জন, এর মধ্যে পাশ করেছে ৪৮ হাজার ৬৫৭ জন। ফেল ৫০,৯১৯জন শিক্ষার্থী। গত
পাঁচ বছরে সবচেয়ে কম পাসের হার এবছর, জিপিএ ৫ ও কমে এসেছে পাঁচ হাজারেরও
বেশি। ২০২৪ সালেও এই বোর্ডের পাশের হার ছিল ৭১ দশমিক ১৫, সে বছর জিপিএ ৫
পেয়েছে ৭৯২২ জন। এদিকে দেশের সামগ্রিক ফলাফলে সবচেয়ে নিচে আছে কুমিল্লা
শিক্ষা বোর্ড।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের
মধ্যে পাসের হারে এগিয়ে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড, আর পিছিয়ে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড।
ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে এ বছরের পাসের হার ৬৪ দশমিক ৬২। কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে
পাসের হার ৪৮ দশমিক ৮৬। ছাড়াও রাজশাহীতে ৫৯ দশমিক ৪০ শতাংশ, যশোরে ৫০ দশমিক
২০ , চট্টগ্রামে ৫২ দশমিক ৫৭, বরিশালে ৬২ দশমিক ৫৭, সিলেটে ৫১ দশমিক ৮৬,
দিনাজপুরে ৫৭ দশমিক ৪৯, ময়মনসিংহে ৫১ দশমিক ৫৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস
করেছেন।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর রুনা নাছরীন
বলেন, এ বছর ইংরেজি ও উচ্চতর গণিতে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল হয়েছে। ইংরেজিতে
পাস করেছেন ৬৫ দশমিক ২৮ এবং উচ্চতর গণিতে পাস করেছেন ৬০ দশমিক ৪৮ শতাংশ
পরীক্ষার্থী।
তিনি জানান, এ বছর বোর্ডের ১৫২ টি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব
ভেনু কেন্দ্র বাতিল করা হয়। এছাড়াও পরীক্ষার খাতা দেখা হয়েছে খুবই সতর্কতার
সাথে। যার প্রভাব পড়েছে ফলাফলে। তবে পাশের হার কম হলেও এটিই কুমিল্লা
শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসির ফলাফলের প্রকৃত চিত্র। এছাড়া নকলমুক্ত পরীক্ষা
হওয়ার কারণেও পাশের হার কমে এসেছে।
অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানান, কোন কোন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ঘাটতি রয়েছে সেগুলো খুঁজে বের করা হবে।
শিক্ষার্থীরা
বলছে, ইংরেজি ও আইসিটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কঠিন হয়েছিলো। এছাড়া উচ্চতর
গণিতও ভুগিয়েছে। এমনও হতে পারে, কঠোরভাবে উত্তরপত্র নিরীক্ষণের কারনে পাশের
হার কমে এসেছে। তবে নিজস্ব কেন্দ্র ভেন্যু পরিবর্তনের কারণে ফলাফলে প্রভাব
পড়েছে এ বিষয়ে তাদের রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একই সাথে পরীক্ষার
প্রস্তুতি সময় বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত থাকার
বিষয়টির প্রভাবের কথাও জানিয়েছে তারা।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে
পাস করা শিক্ষার্থী নাজমুন জান্নাত বলেন, আমি ইংরেজি পরীক্ষা ভালো
দিয়েছিলাম কিন্তু আশানুরুপ নম্বর পাইনি। কেন এমন হলো বুঝতে পারছি না। আর
ভালো পড়াশোনা করলে কেন্দ্র কোন বিষয় না, যে কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে দেয়া হবে
সে কেন্দ্র থেকেই ভালো ফলাফল করা সম্ভব।
একই কলেজের শিক্ষার্থী সাকিব
আহমেদ জানালেন, উচ্চতর গণিতের নম্বর কম এসেছে। কেউ কেউ আইসিটি এবং
ইংরেজিতেও কম নম্বর পেয়েছে। যারা পড়াশোনা করেনি তারা এবছর কোন ভাবেই ভালো
ফলাফল করতে পারেনি। সুতরাং এটি ফলাফলের প্রকৃত চিত্র। তবে পুরো নিরীক্ষণের
জন্য আবেদন করলে হয়তো কিছুটা সামগ্রিক ফলাফলে পরিবর্তন আসতে পারে।
কুমিল্লা
ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, পাশের হার
কম হয়েছে এটি বাস্তব চিত্র। এটিকে যদি আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখি, তাহলে
দেখা যাবে আগামী দিনগুলোতে শিক্ষার্থীদের মাঝে ভালো পড়াশোনার প্রতিযোগিতা
বাড়বে। কোনরকম পড়ালেখা করে পাশ করে যাওয়ার প্রবণতা থেকে পরে আসবে
শিক্ষার্থীরা। আমি এখানে ফলাফল বিপর্যয় না দেখে বরং ফটিকভাবে নিরীক্ষণের
চিত্র দেখতে পাই।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ
শামসুল ইসলাম জানান, এবছরের ফলাফলে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে আছে। এবার
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের ৯ কলেজে কেউ পাশ করেনি। অপরদিকে শতভাগ পাশ করেছে
৫টি কলেজ। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পাশের হার সবচেয়ে কম। গত পাঁচ বছরের
মধ্যে সবচেয়ে কম পাশের হার এ বছর কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে। তবে বিগত
বছরগুলোতে নানান কারণে পরীক্ষা ও প্রশ্নপত্র সঠিকভাবে ম‚ল্যায়ন হয়নি বলে ও
সমালোচনা রয়েছে।
তিনি জানান, ফলাফল আরো ভালো করতে কোন কোন বিষয়ে নজর
দেয়া লাগবে সেগুলো খুঁজে বের করা হবে। খুব দ্রæত সময়ের মধ্যে প্রতিটি জেলায়
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন করে নির্দেশনা দেয়া হবে।
