মঙ্গলবার ১১ নভেম্বর ২০২৫
২৭ কার্তিক ১৪৩২
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক কুমিল্লার শতকোটি টাকার বিশ্রামাগার বিশ্রামে
নিদ্রাভাব নিয়ে ডাকাত আতঙ্কে ক্লান্ত চালক
প্রকাশ: রোববার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৩৭ এএম আপডেট: ১২.১০.২০২৫ ১:৩০ এএম |


 নিদ্রাভাব নিয়ে ডাকাত আতঙ্কে ক্লান্ত চালকনিজস্ব প্রতিবেদক।। দেশের অর্থনীতির প্রধান লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি-রপ্তানির হাজারো ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, কন্টেইনার ও ছোট বড় বিভিন্ন পণ্যবাহী যান প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে রাজনীতিসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে যায়। অথচ দেশের এই ব্যস্ততম মহাসড়কে ক্লান্ত ও নিদ্রাহীন অবস্থায় দিনরাত গাড়ি চালাতে বাধ্য হচ্ছেন চালকরা। ফলে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে প্রাণহানি, কমছে স[ক নিরাপত্তা। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে এ মহাসড়কে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে চুরি, ছিনতাই আর ডাকাতির ঘটনা। দিনে তুলনায় সন্ধ্যা নামতেই বাড়ে ছিনতাই ও ডাকাতির উৎপাত। রাতের আঁধারে পণ্যবাহী কিংবা যাত্রীবাহী পরিবহনে ডাকাতি করে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছেন ডাকাত চক্র। চালকদের অভিযোগ, মহাসড়কের চুরি, ছিনতাই আর ডাকাতির ঘটনায় রীতিমত তারা আতঙ্কগ্রস্ত। যার কারণে শরীর ক্লান্ত কিংবা নিদ্রা ভাব থাকলেও ডাকাতি থেকে বাঁচতে এক টানা গাড়ি চালাতে হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে মহাসড়কে। তাদের দাবি মহাসড়কের নিমসারে নির্মিত বিশ্রামাগারটি চালু হলে নিরাপদে যাত্রা বিরতি করতে পারতেন। এতে ক্লান্তি বা নিদ্রাভাব কেটে গেলে নিরাপদে গন্তব্যেপৌঁছতে পারতেন পন্য নিয়ে। 
হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা রিজিয়নের তথ্য অনুযায়ী, গেল বছর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৭১টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৫২ জন। আর চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসেই দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬৯৫টি, যেখানে মারা গেছেন ২৬০ জন মানুষ। এসব দুর্ঘটনার বড় অংশ ঘটেছে চালকদের বিরামহীন গাড়ি চালানোর কারণে।
হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহীনুর আলম খান বলেন, দীর্ঘপথে চালকদের জন্য নিরাপদ বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা না থাকায় তারা সড়কের ধারে থেমে বিশ্রাম নিতে বাধ্য হন। এতে একদিকে চুরি-ছিনতাইয়ের ঝুঁকি বাড়ে, অন্যদিকে ক্লান্তির কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বাড়ছে। তবে মহাসড়কে পণ্যবাহী ছাড়াও যাত্রীবাহীসহ সকল যানবাহন নিরাপদে চলাচলের জন্য হাইওয়ে পুলিশের টহল দল ২৪ ঘন্টাই টহলে থাকেন। একইসঙ্গে দিনে তুলনায় রাতে বেশি ঝুঁকি থাকায় হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গেজেলা পুলিশকেও সংযুক্ত করা হচ্ছে অপরাধ দমনে। জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের নিয়মিত তৎপরতায় আগের তুলনায় অনেকাংশে কমেছে এসব অপরাধ। এছাড়াও অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত টহলে থাকেন পুলিশ।
এদিকে ২০১৯ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার নিমসার এলাকায় চালকদের জন্য আধুনিক বিশ্রামাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। ৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কুমিল্লার নিমসারে নির্মিত হয়েছে দেশের অন্যতম আধুনিক ট্রাক ড্রাইভার বিশ্রামাগার। প্রায় ১৩ একর জায়গাজুড়ে গড়েতোলা হয়েছে চারতলা বিশিষ্ট দুটি ভবন, যেখানে একসঙ্গে থাকতে পারবেন ১০০ চালক। রয়েছে শতাধিক ট্রাক পার্কিংয়ের জায়গা, নামাজের ঘর, গোসলখানা, ক্যান্টিন, চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রসহ আধুনিক সব সুবিধা।
উদ্দেশ্য ছিল,চালকদের জন্য নিরাপদ বিশ্রামের জায়গা তৈরি করা, যাতে তারা ক্লান্তি দ‚র করে পুনরায় সজীবভাবে গাড়ি চালাতে পারেন। কিন্তু নির্মাণ শেষে এক বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও চালু হয়নি সেই বিশ্রামাগার। ফলে বিশ্রামাগারটি পড়ে আছে অচল অবস্থায়, আর চালকরা বঞ্চিত হচ্ছেন সরকারি এই সেবাটি থেকে।
চট্টগ্রামবন্দর থেকে কনটেইনার বোঝাই পণ্যনিয়ে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন ট্রাক চালক মো. রুবেল মিয়া। তিনি বলেন, বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রওনা দিয়েছি ঢাকার উদ্দেশ্যে। রাত ১১-১২টার মধ্যে ঢাকায় প্রবেশের কথা ছিল। কিন্তু সড়কের বিভিন্ন জায়গায় যানবাহনের ধীরগতি থাকায় নির্ধারিত সময়ে ঢাকায় প্রবেশ করা যায়নি; কুমিল্লার সুয়াগাজীতেই রাত ২টা বেজে যায়। শরীরের ক্লান্তি এবং নিদ্রা ভাব দুইটাই চেপে বসে। দিনের বেলায় ঢাকায় প্রবেশ করতে পারবো না; যার কারণে বাধ্য হয়ে সড়কের পাশে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা বিরতি করতে হয়েছে। এই যাত্রা বিরতি করতে গিয়ে মহাসড়কে চুরি ছিনতাই এবং ডাকাতির আতঙ্ক কাজ করছে নিজের মধ্যে তারপরেও ঝুঁকি নিয়েছি। কারণ নিরাপদ কোন যাত্রা বিরতির জায়গা নেই। 
দিনরাত গাড়ি চালাই। কোথাও বসে একটু চোখ বন্ধ করার জায়গা নেই। কখনো রাস্তার পাশে গাড়ি থামাই, আবার ভয় লাগে চুরি-ছিনতাই না হয়। কথাগুলো বলছিলেন আরেক চালক সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, নিমসারের বিশ্রামাগারটা চালু হলে আমাদের অনেক উপকার হতো। একবার খবর পেয়েছিলাম, তৈরি হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো তালা মারা আছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এবং কুমিল্লা ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম বলেন, চালকরা মহাসড়কে সবচেয়ে অবহেলিত। তাঁদের জন্য নিরাপদ বিশ্রামের ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ঘটনা হচ্ছে, পণ্য হারাচ্ছে, জীবন যাচ্ছে। নিমসারের বিশ্রামাগারটি দ্রæত চালু 
করার জন্য আমরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্তৃপক্ষ এবং জাতীয় মহাসড়ক বিভাগের সঙ্গেবেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। একই সঙ্গে শনিবার (১১ অক্টোবর) চট্রগ্রামে বিভাগীয় পর্যায়ে বিশ্রামাগারটি দ্রæত চালুর জন্যবৈঠক হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে খুব দ্রæতই এ বিশ্রামাগারটি চালু হবে। একইসঙ্গে আরেকটি বিশ্রামাগারের জন্য আবেদন করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। আশা রাখি সেটির বিষয়েও সরকার দ্রæত সিদ্ধান্ত নিবেন।
নিরাপদ চালক চাই সংগঠনের কুমিল্লার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আজাদ সরকার বলেন, একজন চালক ৫ ঘন্টার বেশি একটানা গাড়ি চালানোর নিয়ম নেই। ৫ ঘন্টা গাড়ি চালানোর পর তাকে যাত্রাবিরতি কিংবা বিশ্রাম নেওয়া বাধ্যতাম‚লক। কিন্তু মহাসড়কের পাশে তেমন কোন ব্যবস্থা না থাকায় তারা বাধ্য হচ্ছেন পাঁচ ঘন্টার বেশি একটানা গাড়ি চালাতে। কুমিল্লার নিমসারে নির্মিত চালকদের বিশ্রামাগার চালু না করা শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, এটি মানবিক অবহেলা। ভবন বানিয়ে তালা ঝুলিয়ে রাখলে সেটি উন্নয়ন নয়, অপচয়। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে বিশ্রামাগার চালু করা জরুরি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের কুমিল্লা নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, নকশা পরিবর্তন, ব্যয় বৃদ্ধি এবং প্রশাসনিক জটিলতাসহ নানা কারণে প্রকল্পের কাজ শেষ হতে সময় লেগেছে পাঁচ বছর। ২০২৪ সালের জুনে নির্মাণ কাজ শেষ হলেও ইজারা বা অপারেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতিতে পরিচালনা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা রয়েছে। বিশ্রামাগারটি চালের জন্যবেশ কয়েকবার মন্ত্রনালয়ে লেখালেখি ও করা হয়েছে। এটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্যবেসরকারি অংশীদারিত্বে ইজারা দেওয়া হবে কি না, নাকি সরকারি ব্যবস্থাপনায় চালানো হবে সেই সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। সিদ্ধান্ত হলেই এটি চালু করা হবে।
অন্যদিকে সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শতকোটি টাকা ব্যয় করে অবকাঠামো নির্মাণ করেও তা ব্যবহার না করা এক ধরনের জাতীয় অপচয়। অবিলম্বে বিশ্রামাগারটি চালু করলে চালকদের ক্লান্তি কমবে, দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে, আর সামগ্রিকভাবে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
















http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
মেজর এম এ গণির ৬৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
নির্বাচনের কাউন্টডাউন শুরু, ৯০ দিনের মধ্যে ভোট
বিএনপির প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিরোধ সামলাতে নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানের যাচাই
দাউদকান্দিতে নিখোঁজের তিনদিন পর যুবকের মরদেহ উদ্ধার
লালমাইয়ে ৩ যুবলীগ নেতা গ্রেফতার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
লাকসামে দোলার প্রচারণায় হামলা
সেই সড়কের সংস্কার কাজ শুরু
কুমিল্লায় স্বস্তি ফিরছে সবজির দামে
নির্বাচনের কাউন্টডাউন শুরু, ৯০ দিনের মধ্যে ভোট
কুমিল্লা মেডিকেল ও ঢাকার বাসায় গিয়েও আহত দোলার দেখা পাননি আবুল কালাম
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২