
চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে সরকার। এ লক্ষ্যে গত ১০ আগস্ট ভারত থেকে ৪ লাখ ৬১ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে এসব চাল আমদানির জন্য ২৪৫টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়। কেউ কেউ বিভিন্ন বন্দর দিয়ে চাল আমদানি করেন। এতে চালের দাম কিছুটা কমলেও আশানুরূপ নয়। ভারত অভ্যন্তরীণ খাদ্যনিরাপত্তা ও ম‚ল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল রপ্তানি নিরুৎসাহিত করতে কিছু বিধিনিষেধ ও শুল্ক আরোপ করেছে। দেশটির বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ রাখতে যেকোনো সময় চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়কে পুঁজি করে বাংলাদেশের বাজারে কেউ সিন্ডিকেট করে চালের দাম যাতে রাতারাতি বাড়াতে না পারে, সেজন্য অন্তর্র্বর্তী সরকার ভিয়েতনাম, মায়ানমার ও পাকিস্তান থেকে চাল আমদানির প্রস্তুতি নিয়েছে। বিষয়টি বিবেচনা করে এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, অর্থ, বাণিজ্য, কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড ও ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) বাজারে চাল আমদানির সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা একাধিক বৈঠক করেছেন। বৈঠকে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে করণীয় নির্ধারণে আলোচনা হয়। ভারতের ওপর দেশের চালের বাজারের নির্ভরশীলতা কমিয়ে নতুন বাজার থেকে আমদানি বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন তারা। স্থানীয়ভাবে চাল মজুত করে বাজারে কেউ যাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য কঠোর নজরদারির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
চাল ব্যবসায়ীদের অনেকে স্বীকার করেছেন, ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ হলেই দেশের বাজারে চালের দাম বেড়ে যায়। এর আগে ভারত থেকে চাল আমদানি হলেও দেশের বাজারে চালের দাম এখনো বেশি। সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যবসায়ী বলছেন, ভারত বাংলাদেশে চাল বিক্রি বন্ধ করলে দেশের একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বা আড়তদার ও মিলমালিকরা দাম বাড়িয়ে দেন। খুচরা ব্যবসায়ীরাও একই কথা বলছেন। যারা এ ধরনের অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত তারা প্রকৃত চাল ব্যবসায়ী নন বলে তারা অভিযোগ করেছেন। তারা গোডাউনে এমনকি বাড়িতেও প্রচুর ধান ও চাল মজুত করে রাখেন। ভারত চাল আমদানি বন্ধঘোষণা করা মাত্র সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়ে দেন।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভারত নিজের দেশের বাজার স্থিতিশীল রাখতে যেকোনো পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। সিদ্ধান্ত দেশটির নিজস্ব। ভারতের এমন সিদ্ধান্ত ঘিরে আমাদের দেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়াতে পারেন। এর আগে পেঁয়াজের ঘটনায় আমরা সবাই এমনটাই দেখেছি। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর এ দেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা রাতারাতি দেশের বাজারে কয়েক গুণ দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেছেন। এ ক্ষেত্রে একক কোনো দেশে বাজারের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কাটাতে হবে। সরকারের দায়িত্ব সাধারণ মানুষ যাতে ভোগান্তিতে না পড়েন সে পদক্ষেপ নেওয়া।
দেশের চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাই। বাজার ব্যবস্থা যাতে স্বাভাবিক থাকে, সেজন্য বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার বৈঠক করেছেন। কেউ যাতে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য সরকার আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বিশেষ করে যারা অবৈধভাবে ধান ও চাল মজুত করেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা করতে হবে। একক বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে। যাতে সংকটময় পরিস্থিতিতে চালসহ যে কোনো পণ্যের আমদানি অব্যাহত রাখা যায়।
