
ফেসবুকে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব দেশের হাজারও মানুষ। চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিদেশে পাঠাতে প্রতারকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করছে। এভাবে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তারা তরুণদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জাঁকজমকপ‚র্ণ অফিস নিয়ে প্রতারণার কাজটি মাসের পর মাস চালিয়ে যাচ্ছে চক্রটি। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে রয়েছে তাদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। এ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রধানত বেকার তরুণদের ফাঁদে ফেলার প্রাথমিক কাজটি সম্পন্ন করে তারা। চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নানাভাবে প্রলোভনে ফেলে দেশের সহজ-সরল মানুষকে প্রতারিত করছেন। এ চক্রটি নামমাত্র ভিসা প্রসেসিং ফি জমা নিয়ে ফাঁদে ফেলার প্রথম কাজটি শুরু করে। বিজ্ঞাপনে বলা হয় এক মাসের মধ্যে ইউরোপ, কানাডা যাওয়ার অপ‚র্ব সুযোগ করে দেওয়া হবে। ভিসা প্রসেসিং ফি জমা নেওয়ার পর জাল ডকুমেন্ট দেখিয়ে একেকজনের কাছ থেকে কয়েক ধাপে ৮ থেকে ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এভাবে প্রতারক চক্র কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর অফিস বন্ধ করে গা ঢাকা দেয়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে এসব দেখার টাস্কফোর্স থাকলেও পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো তথ্য চোখে পড়ছে না।
ভুক্তভোগীরা বিদেশে যাওয়ার জন্য ঋণ করে দালাল ও এজেন্সির কাছে টাকা দিলেও সময়মতো বিদেশ যেতে পারেন না। বরং টাকা ফিরে পাওয়ার জন্য ভুক্তভোগীদের মাসের পর মাস দালালদের পেছনে ঘুরতে হয়। এভাবে তাদের নানা রকম হয়রানির শিকার হতে হয়। গ্রামাঞ্চলে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা বেশি, তাই তারা বিদেশ যাওয়ার নিয়মকানুন সম্পর্কে ততটা সচেতন নন। প্রতারক চক্র তাদের বেশি আয়ত্তে নিয়ে থাকে। ভুক্তভোগীরা জানান, বিদেশে কেউ বৈধভাবে গিয়ে প্রতারণার শিকার হলে মন্ত্রণালয় শুধু সেসব অভিযোগ আমলে নেয়। তবে মন্ত্রণালয় স‚ত্র বলছে, ভুক্তভোগীরা যদি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে অথবা অনলাইনে সময়মতো অভিযোগ করতে পারেন তবে টাকা ফেরত পেতে পারেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং ও এনফোর্সমেন্ট অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব এ জেড এম নুরুল হক বলেন, ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে আমরা এমন কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত পাইনি। এ ধরনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেব। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রæপ খুলে বিজ্ঞাপন দিয়ে লোক সংগ্রহ করা সম্প‚র্ণ অবৈধ।
এ ধরনের প্রতারণা ঠেকাতে সরকারকে নজরদারি বাড়াতে হবে। এজেন্সিগুলোর জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও আইন করতে হবে। অবৈধ এজেন্সিগুলোর তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। এ ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়িত এজেন্সিগুলোর লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করতে হবে। সেই সঙ্গে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ফেসবুকে যারা প্রতারণা করছেন তাদের নজরদারির আওতায় এনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সচেতনতা বাড়াতেও পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে কেউ অবৈধভাবে বা দালালদের খপ্পরে পড়ে বিদেশে যেতে না পারে। আশা করছি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে বেকারদের প্রতারণার ফাঁদ থেকে বাঁচতে সহায়তা করবে।
