
ড্রেসিংরুমের
দরজার সামনে জটলা। সমর্থক, জাতীয় স্টেডিয়ামের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকাদের
ভিড়। কারণটা আর কিছু নয়, বাংলাদেশ ফুটবলের সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড়
তারকা হামজা চৌধুরীর সাথে সেলফি তোলা। একে একে সবার দাবি মেটালেন তিনি।
এরপর এলেন গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে কথা বলতে। সেখানেও প্রশ্নের ভীড় সামাল
দিতে গলদঘর্ম বাফুফের মিডিয়া ম্যানেজার সাদমান সাকিবের। হামজা অবশ্য সবকিছু
সামাল দিলেন দারুণভাবে। হাসিমুখে, সিলেটি-ইংরেজি ভাষার মিশেলে জানিয়ে
গেলেন হংকং চায়না ম্যাচ নিয়ে ব্যক্তিগত ও দলীয় লক্ষ্য।
জাতীয় স্টেডিয়ামে
বৃহস্পতিবার হংকংয়ের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তৃতীয়
রাউন্ডের বৈতরণী পার হতে ম্যাচটি হামজাদের জন্য ভীষণ গুরুত্বপ‚র্ণ। এ
মুহ‚র্তে ‘সি’ গ্রুপের টেবিলে সিঙ্গাপুর ও হংকং চায়নার পয়েন্ট ৪ করে। তিন
ম্যাচে বাংলাদেশ ও ভারতের পয়েন্ট ১ করে। বাছাই পেরুনোর নিভু নিভু স্বপ্নে
নতুন প্রাণের সঞ্চার করতে ঘরের মাঠে এই ম্যাচে জয় ছাড়া তেমন কোনো বিকল্প
নেই বাংলাদেশের সামনে।
দলকে সামনের পথ দেখানোর ম‚ল দায়িত্ব যথারীতি
চাপছে হামজার কাঁধে। গত মার্চে শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে লাল-সবুজের জার্সিতে
অভিষেক ম্যাচে ড্রয়ের প্রাপ্তি সঙ্গী হয়েছিল তার। এরপর ঘরের মাঠে খেলা
প্রথম ম্যাচে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ২-১ গোলে হারের তেতো অভিজ্ঞতা নিয়ে ছাড়তে
হয়েছিল মাঠ। বাছাইয়ে এখনও জয়ের স্বাদ পাওয়া হয়নি হামজার; বাংলাদেশেরও।
অধরা
সেই স্বাদ পেতে মরিয়া হামজাও। তাকে ছড়াই হংকং ম্যাচ উপলক্ষ্েয সপ্তাহ
খানেক প্রস্তুতি নিয়েছে দল। হামজা এ নিয়ে দুই দিন অনুশীলন করলেন। সব মিলিয়ে
বাছাইয়ের ম্যাচ উপলক্ষে দেশের মাটিতে তিনি এলেন এ নিয়ে তৃতীয়বার। ফলে আগের
চেয়ে এবার কোচ ও দলের সাথে বোঝাপড়া বেশি হয়েছে বলেই বিশ্বাস লেস্টার সিটির
এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের। যেটা তাকে অতীতের চেয়ে করে তুলছে আরও বেশি
আত্মবিশ্বাসী।
“কোচ সব বড় সিদ্ধান্ত নেন৷ কিছু বিষয় নিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস
করেন। সেখানে আমি আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে সহায়তা করি। দল সপ্তাহ খানেক ধরে খুব
পরিশ্রম করছে। ইনশাল্লাহ, পরিকল্পনা ঠিক আছে। এবার আমি খুব আশাবাদী, এ নিয়ে
তৃতীয়বার আমি এলাম। কোচ ও খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব ভালো হয়েছে।”
“দল
সপ্তাহখানেক ধরে কঠোর পরিশ্রম করছে। দলে এসে ভালো লাগছে। ইনশাল্লাহ আমরা
জিতমু। হংকংয়ের বিপক্ষে জয়ের খুব ভালো সুযোগ আছে। আমি কোচের সঙ্গে কথা
বলছি। আমাদের মেধা আছে, আগ্রাসী মনোভাব আছে, অনেক আত্মবিশ্বাস
আছে-ইনশাল্লাহ আমরা উইনিং টিম হমু।”
হংকং ম্যাচের প্রস্তুতি শাণিয়ে নিতে
গত সেপ্টেম্বরে নেপালের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলতে গিয়েছিল
বাংলাদেশ। জেন-জির বিক্ষোভে দেশটির সরকার পতনে দ্বিতীয় ম্যাচটি মাঠেই গড়াতে
পারেনি। প্রথম ম্যাচটি হয়েছিল গোলশ‚ন্য ড্র। এই সফরে হামজার দলের সঙ্গী
হওয়ার কথা থাকলেও তিনি আসেননি। এদিন নেপালে সফরে যেতে না পারার কারণও
জানালেন হামজা।
“নেপাল সফরে আমি যাইনি কারণ আমার গোড়ালিতে একটু চোট ছিল।
আমরা শুক্রবার রাতে বার্মিংহামের বিপক্ষে খেলেছিলাম, তবে তার আগেও মৌসুমের
শুরু হওয়ায় আমার পায়ে কিছুটা ব্যথা ও টান ছিল।”
বাছাইয়ে নিজেদের মাঠে
সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে হেরে যাওয়া ম্যাচ নিয়েও কথা বললেন হামজা। ওই ম্যাচে
শেষ দিকে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের বক্সে ফাউলের শিকার হওয়ায় বাংলাদেশের
পেনাল্টি পাওনা ছিল বলেও মনে করেন তিনি।
“আমাদের দিক থেকে আমরা মাঠে
নেমেছিলাম এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। দিনটা আমাদের পক্ষে যায়নি। শেষ
পর্যন্ত খেলা নির্ধারিত হয়েছে কিছু মুহ‚র্তের পারফরম্যান্স ও সিদ্ধান্তের
উপর। যেমন আমি বলেছি, আমরা দুটি অসাবধানী মুহ‚র্তে এমন গোল হজম করেছি, যা
করা উচিত ছিল না। শেষদিকে আমাদের একটা পেনাল্টিও দেওয়া উচিত ছিল।”
ওই
ম্যাচের অন্তিম সময়ে গোলের ভালো সুযোগ নষ্ট করেছিলেন হামজা নিজেও। তবে এবার
আর সুযোগ নষ্টের হতাশায় পুড়তে চান না তিনি। বললেন, দেশে থাকা সময়টা উপভোগ
করতে উন্মুখ হয়ে থাকার কথাও।
“আমি (সময়টা) খুব উপভোগ করছি। এটা
বাংলাদেশে আসার প্রিয় সময় আমার কাছে। দ্বিতীয়বারের মতো আমার স্ত্রী ও
বাচ্চারাও এসেছে। পুরো পরিবারের অভিজ্ঞতা ভালো। সবাই আমাকে ভালোবাসছে।”
সবার এই ভালোবাসার প্রতিদান হংকং ম্যাচে দিতে চান হামজা। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পৌঁছাতে চান লক্ষ্যে।
