নারায়ণগঞ্জে
একটি ফ্ল্যাট বাসা থেকে একই পরিবারের তিনজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে গলায় গামছা পেঁচানো গৃহকর্তার মরদেহ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে
ঝুলছিল এবং পাশের কক্ষের খাটের উপর ছিল স্ত্রী-সন্তানের বালিশ চাপা মরদেহ
ছিল বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী জানান।
নিহতরা হলেন- মো. হাবিবুল্লাহ শিপলু (৩৫), তার স্ত্রী মোহিনী আক্তার মীম (২৪) এবং তাদের চার বছরের ছেলে আফরান।
সোমবার
বিকাল ৫টার দিকে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের
ভূঁইয়াপাড়া এলাকার বাসা থেকে পুলিশ মরদেহগুলো উদ্ধার করে।
পুলিশ
কর্মকর্তা মেহেদী বলেন, চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাড়া
থাকতেন শিপলু। দরজাটি বিকালে ভেতর থেকে বন্ধ পেয়ে স্থানীয়রা নিহতের
আত্মীয়-স্বজনের উপস্থিতিতে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তিনজনের মরদেহ দেখতে পান।
“প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হাবিবুল্লাহ শিপলু তার স্ত্রী ও সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন।”
স্থানীয়
লোকজন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দির
স্থায়ী বাসিন্দা হলেও শিপলু এ এলাকাতেই বড় হয়েছেন। এলাকার বউবাজারে
‘সম্মিলিত সঞ্চয় তহবিল’ নামে একটি সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার)
ছিলেন। কোভিড মহামারীর সময় সমিতির পরিচালক রজমান আলী গ্রাহকদের টাকা নিয়ে
পালিয়ে গেলে সমিতির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
পরে রজমান র্যাবের হাতে
গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বেরিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। ফলে সমিতির গ্রাহকরা
তাদের টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে শিপলুর উপর চাপ সৃষ্টি করছিলেন। সমিতির টাকা
আত্মসাতের ঘটনায় গ্রাহকদের মামলারও আসামি ছিলেন শিপলু।
নিহতদের পাশের
ফ্ল্যাটের বাসিন্দা এক নারী বলেন, “চার মাস আগে এই ফ্ল্যাটে ভাড়া আসে
পরিবারটি। এর আগেও আশপাশের বাড়িতেই ভাড়া থাকতো। সমিতি বন্ধ হওয়ার পর লোকজন
যারা টাকা পাইত তারা অনেক ঝামেলা করত। কিন্তু ইদানিং তেমন লোকজন দেখি নাই।”
নারায়ণগঞ্জ
সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ নাছির আহমদ বলেন, “একটি সমিতির ম্যানেজার
ছিলেন শিপলু। কোভিডের সময় সমিতিটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু অনেক গ্রাহক তাদের
টাকা না পাওয়ায় মামলা করে, তাতে শিপলুও আসামি। গত সপ্তাহে ওই মামলায়
হাজিরাও দিয়েছেন। তিনি ওই এলাকাতে থাকার কারণে প্রতিনিয়ত সমিতির পাওনাদাররা
তাকে টাকার জন্য তাগাদা দিতেন।”
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী
বলেন, “সমিতি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে অর্থনৈতিকভাবে তিনি বিপর্যস্ত ছিলেন।
ধারণা করা হচ্ছে, অভাব-অনটনের কারণে হয়তো তিনি প্রথমে স্ত্রী ও সন্তানকে
শ্বাসরোধে হত্যা করেন; পরে পাশের রুমে গিয়ে নিজেও গলায় ফাঁসি দিয়ে
আত্মহত্যা করেন।”
তবে, ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হবে বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
