কুমিল্লার
মুরাদনগরে ঘোষণা দিয়ে লোকজন ডেকে এনে মা ও তার দুই সন্তানকে প্রকাশ্যে
পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় সুনসান নিরবতা নীরবতা ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে
কড়বাড়িসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে। জনশূন্য হয়ে পড়েছে গ্রামগুলো। ঘটনার পর
থেকেই এলাকার সকল দোকান-পাট বন্ধ রয়েছে। রুবির বাড়ির সামনে আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীর সদস্য মোতায়ন করা হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে কড়ইবাড়ি এলাকায়
রুবির বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে দেখা গেছে, বাড়ির ভিতরে উঠানে রুক্তের ছোপছোপ
দাগ। পাহারায় থাকা এক পুলিশ সদস্য জানালেন, এই উঠানে রুবিকে হত্যা করা
হয়েছে। বাড়ির সিঁড়ির কাছে যেতেই বস্তা ও কাপড় দিয়ে ঢাকা জমাটবাঁধা রক্তের
দাগ দেখিয়ে ওই পুলিশ সদস্য বললেন, রুবির ছেলে রাসেলকে এখানে পিটিয়ে হত্যা
করা হয়। বাড়ির বাহিরে রাস্তার পাশে একটি দোকানের সাঁটারের রক্তের দাগ
দেখিয়ে রুবির বাড়ির ভাড়াটে রহিমা বেগম বলেন, এখানে জোনাকিকে পিটিয়ে হত্যা
করা হয়। রুহিমা বেগম কালের কণ্ঠকে আরও বলেন, জোনাকি লোকজনের ভয়ে বাড়ি থেকে
পালাতে চেয়েছিলেন কিন্তু পালাতে পারেনি। লোকজন তাকে এখানে ধরে পিটিয়ে হত্যা
করে।
কড়ইবাড়ি বাজার জামে মসজিদ গিয়ে দেখা গেছে, জুমার নামাযে
মুসল্লির সংখ্যা একেবারেই কম। যারা নামাযে এসেছেন তাদের মধ্যে কয়েকজন
মুসুল্লি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর এলাকার
সকল দোকান পাট বন্ধ রয়েছে। মামলা, স্বাক্ষি ও ঢালাও গ্রেপ্তার আতঙ্কে
পালিয়ে গেছেন গ্রামের পুরুষ। তাই মসজিদ ফাঁকা।
রুবির বাড়ির ভাড়াটে
মোসা. রহিমা বেগম আরও বলেন, এখনো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
বাড়িতে সারারাত পুলিশ ছিল এখনো বাড়িটি পুলিশ পাহারায় রয়েছে। রুবির পুরো
পরিবার মাদকের সঙ্গে জড়িত এটা সত্য। আমি নিজেও এই বাড়িতে থেকে অনেকবার চলে
যেতে চেয়েছিলাম , রুবি বেগমকে যেতে দেয়নি, যখন বলতাম বাড়ি ছেড়ে দেব তখন
রুবি বেগম আমার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করে বলত, তোর কাছে আমি ১ লাখ টাকা
পাই এটা দিয়ে বাড়ি ছেড়ে দেয়। আমি গরিব মানুষ অত টাকা দেবো কোথায় থেকে। তাই
আমি তার বাড়ি ছাড়তে পারি নাই। ঘটনার বিবরণ সম্পর্কে রহিমা বেগম বলেন, সকাল
সাড়ে ৯ টার দিকে গ্রামের কয়েক’শ লোক রবি বেগমের বাড়ির ঘিরে ফেলেন। তখন আমি
বাড়িতে ছিলাম, আমার ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে বাড়ির ছাদে কোনরকম আত্মগোপন করি।
পরে আমার স্বামীকে ফোন করলে সে এসে আমাকে নিচে নামায়। নিচে নেমে দেখি
সিঁড়ির গোড়ায় রাসেলের মৃতদেহ পড়ে আছে। বাড়ির উঠানে রুবি বেগমের মৃতদেহ আর
রাস্তার দোকানের সামনে জোনাকির মৃতদেহ পড়ে আছে। হত্যার পর চারদিকে মানুষ
উল্লাস করছে। আমরা ভারাটে তাই আমাদের কেউ মারেনি। আমরা কোনরকম জীবন নিয়ে
বের হই। রুবির ছোট মেয়ে রুমাকে লোকজন ধরে হাসপাতালে নিতে দেখেছি, এখন সে
বাঁচবে কিনা জানিনা।
বাঙ্গরা বাজার এলাকার ব্যবসায়ী মো. রাহাত ও
সোলায়মান বলেন, আমি ঘটনার প্রত্যক্ষদশী । শত শত মানুষের হাতে লাঠি ও রড।
তারা এক সাথে বাড়িতে ডুকে যাকে যেখানে পেয়েছে পিটিয়ে মেরেছে। তারা মাদকের
সঙ্গে জড়িত এটা সঠিক কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে গ্রামবাসী অন্যায়
করেছে।
গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জেলার মুরাদনগর উপজেলার
বাঙ্গরা বাজার থানার কড়ইবাড়ী গ্রামে এলাকাবাসী একটি মোবাইল ছিনতাই ও মাদক
‘ব্যবসার’ অভিযোগ তুলে মা ও তার এক মেয়ে ও এক ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করে।
নিহতরা হচ্ছেন, ওই গ্রামের খলিলুর রহমানের স্ত্রী রোকসানা আক্তার রুবি
(৫৮), তার ছেলে মো. রাসেল মিয়া (৩৫) ও মেয়ে জোনাকি আক্তার (৩২)। হামলায় আহত
হয়েছেন রুবির আরেক মেয়ে রুমা আক্তার (২৫। তাকে শংকাটাপন্ন অবস্থায়
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (কুমেক) ভর্তি করা হয়েছে।
বাঙ্গরা
বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, রাতে
পুলিশ পাহারায় তিনজনের মরদেহ বাড়ির পাশে কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তবে
নিহতের পরিবারের কেউ থানায় অভিযোগ বা মামলা দায়ের করেনি। এলাকায় অতিরিক্ত
পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।