বৃহস্পতিবার ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
৮ ফাল্গুন ১৪৩১
বেকারত্ব দূরীকরণে উদ্যোক্তা হওয়াও কর্মমুখী শিক্ষা দরকার
অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন লিটন
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫, ১২:৫৬ এএম আপডেট: ১৬.০১.২০২৫ ২:১৬ এএম |

  বেকারত্ব দূরীকরণে উদ্যোক্তা হওয়াও কর্মমুখী শিক্ষা দরকার
বংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ, যেখানে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছর লক্ষাধিক শিক্ষার্থী প্রথাগত শিক্ষা সম্পন্ন করলেও, তারা যথাযথ কর্মসংস্থানের সুযোগ পায় না। এই পরিস্থিতি দেশের আর্থসামাজিক স্থিতিশীলতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এই সমস্যা মোকাবিলায় উদ্যোক্তা হওয়া কার্যকর সমাধান হতে পারে
বর্তমান সময়ে চাকরির পেছনে ছুটতে গিয়ে আমরা অনেক সময় নিজেদের স্বপ্নগুলোকে উপেক্ষা করি। কিন্তু কী হবে যদি আমরা এই চাকরি খোঁজার চক্র থেকে বেরিয়ে এসে উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। উদ্যোক্তা হওয়া শুধু ব্যবসা করাই নয় বরং এটি একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন চিন্তাভাবনা, নতুন উদ্ভাবন এবং সমাজের জন্য নতুন কিছু উপহার দেওয়ার প্রক্রিয়া।
চাকরি খোঁজার চাপ থেকে বেরিয়ে এসে উদ্যোক্তা হওয়া একটি সাহসী এবং ফলদায়ক পদক্ষেপ। যদি আপনার কাছে একটি অসাধারণ আইডিয়া থাকে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারেন, তবে সফলতা আপনার হাতের নাগালে।
উদ্যোক্তা হওয়া শুধু একটি ক্যারিয়ার গড়া নয় বরং এটি একটি জীবন শৈলী। এই যাত্রায় অস্বস্তি ও অজানা অনেক কিছু থাকে, কিন্তু সঠিক মনোভাব এবং পরিকল্পনার মাধ্যমে সফলতা অর্জন করা সম্ভব। উদ্যোক্তা হতে চাইলে প্রস্তুতি, অধ্যবসায় ও সৃজনশীলতা একত্রিত করে কাজ করতে হবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার সাহস থাকলে, এই যাত্রা শেষ পর্যন্ত সাফল্যের দিকেই নিয়ে যাবে।
একজন উদ্যোক্তা হতে হলে প্রথমে একটি মৌলিক ধারণার প্রয়োজন। আপনার পণ্য বা সেবা কী হবে? বাজারে তার চাহিদা কতটুকু? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করতে হবে। এরপর একজন উদ্যোক্তার প্রথম কাজ হলো একটি ভালো ব্যাবসায়িক ধারণা নিয়ে বাজারের চাহিদা বোঝা, প্রতিযোগিতা বিশ্লেষণ করা এবং একটি ইউনিক প্রস্তাবনা তৈরি করা। এরপর আসে একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যা হলো উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক অর্থায়ন। যেখানে বিভিন্ন ব্যাংক ঋণ, বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ, অথবা স্ব-অর্থায়নের বিভিন্ন উপায়ে অর্থের ব্যবস্থা করতে হয়।
অনলাইনের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হওয়া বর্তমানে একটি জনপ্রিয় প্রবণতা। শুধু উদ্যোক্তা হলেই হবে না বরং গ্রাহকদের সঙ্গেও তার সম্পর্ক সুন্দর হওয়া উচিত। ভালো গ্রাহক সেবা কেবল ব্যবসার সাফল্যই নয়, বরং ব্র্যান্ডের চিত্রও উন্নত করে। গ্রাহকরা যখন সন্তুষ্ট হন, তারা পুনরায় আপনার পণ্য কিনতে আগ্রহী হয় এমনকি মৌখিকভাবে আপনার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করেন, যা নতুন গ্রাহক আকর্ষণে সাহায্য করে। আবার গ্রাহকদের মতামত থেকেও জানা যায়, কোথায় উন্নতি করতে হবে কিংবা কীভাবে আপনার পণ্য বা সেবা আরো ভালো করা যায়। কিন্তু অনেক উদ্যোক্তা আছে যারা গ্রাহকদের সঙ্গে ভালো আচরণ করেন না। বরং তাদের পণ্য লেনদেনের সময় প্রতারণা করে, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও খারাপ সেবা প্রদান করে যার ফলে গ্রাহকদের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। এই ধরনের আচরণ দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবসার ক্ষতি করতে পারে। তাই গ্রাহকদের প্রতি সদয় আচরণ এবং সময়মতো সেবা প্রদান করতে হবে। আবার এমন গ্রাহকও আছে যারা পণ্যের গুণমান নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করে। গ্রাহকের প্রতারণা একটি জটিল সমস্যা, তবে সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
বর্তমান যুগে উদ্যোক্তা হওয়া শুধু আপনার জীবনকেই পরিবর্তন করে না, বরং সমাজেও নিয়ে আসে নতুন পরিবর্তন। এমনকি উদ্যোক্তা হওয়ার ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও উন্নতি হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশের বেকার সমস্যার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো শিক্ষাব্যবস্থাও আধুনিক শ্রমবাজারের প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীনতা। প্রচলিত  প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থা সাধারণত তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করে, যা বাস্তব ক্ষেত্রে কাজে লাগানোর সুযোগ কম। ফলস্বরূপ, উচ্চ শিক্ষাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাকরি পাওয়ার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কর্মসংস্থানের অভাব দেখা দেয়। 
কর্মমুখী শিক্ষা এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে, কারণ এটি শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে কাজ শেখায়। যেমন-প্রযুক্তিগত দক্ষতা, সেলাই, কারুশিল্প,কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, আইটি প্রশিক্ষণ ইত্যাদি। এই ধরনের শিক্ষা তাদের নিজেদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগও করে দেয়। দেশের অধিকাংশ জনগণ গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করে এবং তাদের জীবিকা কৃষি বা ক্ষুদ্র শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। কর্মমুখী শিক্ষা তাদের এই খাতে আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতা প্রয়োগের সুযোগ দেয়। পাশাপাশি, দেশে তৈরি পোশাকশিল্প, আইটি সেক্টর এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের চাহিদা পূরণে দক্ষ কর্মী গড়ে তোলাও সম্ভব। 
কর্মমুখী শিক্ষা শুধু চাকরির ক্ষেত্রেই নয়, বরং স্বাধীনভাবে কাজ করার মানসিকতাও তৈরি করে। এটি তরুণদের আত্মনির্ভরশীল হতে উদ্বুদ্ধ করে এবং তাদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ জাগায়। উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করলে তারা নিজেরা যেমন আয়ের পথ খুঁজে পায়, তেমনি অন্যদের জন্যও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
সরকার ইতিমধ্যে কর্মমুখী শিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যেমন- কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা ও যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। তবে এই উদ্যোগগুলোকে আরো কার্যকর করতে হলে, শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে শিল্পক্ষেত্রের প্রয়োজনীয়তার সমন্বয় ঘটাতে হবে। 
কর্মমুখী শিক্ষা তরুণ সমাজকে শুধু অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলে না, বরং তাদের আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি করে। এটি দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি সামাজিক স্থিতিশীলতাও নিশ্চিত করে। কারণ বেকারত্বের ফলে সৃষ্ট সামাজিক সমস্যা যেমন-অপরাধ প্রবণতা, মাদকাসক্তি ও হতাশা অনেকাংশে হ্রাস পেতে পারে
কর্মমুখী শিক্ষা বাংলাদেশের বেকার সমস্যা দূরীকরণে এক অমূল্য হাতিয়ার। এটি শুধু কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে না, বরং একটি আত্মনির্ভরশীল, দক্ষ ও উন্নয়নমুখী জাতি গঠনে সহায়তা করে। 
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, কুমিল্লা আইডিয়াল কলেজ, বাগিচাগাঁও, কুমিল্লা।













সর্বশেষ সংবাদ
আজ লাকসামে আসছেন মির্জা ফখরুল
আলুর দরপতন নিয়ে শঙ্কিত কুমিল্লার কৃষক
কুমিল্লার আবুল ফজল মীরসহ ১৮’র নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা ৩৩ সাবেক ডিসিকে ওএসডি
একশো বছরেও মানুষ আওয়ামী লীগের নাম নিতে লজ্জা পাবে: মামুনুল হক
স্বচ্ছ ব্যালটে কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিতহবে মহানগর বিএনপির নতুন নেতৃত্ব
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লায় বিএনপির জনসভায় চৌদ্দগ্রামের নেতাকর্মীদের বিশাল শোডাউন
লাকসামে বিএনপি মহাসচিবের জনসভা সফল করতে মনোহরগঞ্জে আনন্দ র‌্যালী
আকুবপুর হাইস্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ
তারেক রহমানের ৩১ দফা বস্তবায়ন হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অপরাজনীতি থাকবেনা-আবুল কালাম
নাঙ্গলকোটে মাতৃভাষা দিবসের প্রস্তুতি সভা
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২