'জামাইয়ের
সাথে থাকতে থাকতে বালতি হয়ে গেছো', 'তুমি ঢাকা ছিলা, তোমাকে খুললো কে?'-
এক শিক্ষার্থী পর্দা করায় ‘মৌলবাদী জঙ্গি’ এসব বলাসহ গড় নম্বর দেওয়া,
পাঠদানে স্বেচ্ছাচারিতা, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে শ্রেণিকক্ষে
নানা নেতিবাচক আলোচনা এবং একাধিক নারী শিক্ষার্থীকে বডি শেমিং করার অভিযোগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এছাড়া অভিযুক্ত শিক্ষক যেন
তাদের কোন ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম সম্পৃক্ত না হয় এটি উল্লেখ করে একটি
অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
অভিযুক্ত শিক্ষক হলেন
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: জসিম
উদ্দিন। গত ২২ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে স্নাতকোত্তর ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের
শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় প্রধান বরাবর এই অভিযোগ জানান। অভিযোগপত্রের একটি
অনুলিপি সংবাদের স্বার্থে প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।
অভিযোগপত্রে
শিক্ষার্থীরা শিক্ষক জসিমের বিরুদ্ধে ইনকোর্স সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করা,
বিষয়মূলক পাঠদানে অপারগতা এবং স্বেচ্ছাচারিতা, ক্লাস সময়মতো না নেওয়া,
অধিকাংশ ক্ষেত্রে পূর্ব ঘোষণা ব্যতীত ক্লাস ক্যান্সেল করে দেয়া, প্রিপারেশন
লিভের (পিএল) মাঝেও ইনকোর্স নেয়া, শিক্ষার্থীদের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব
পোষণ করা ও নারী শিক্ষার্থীদের মৌখিক হেনস্তা করা, শিক্ষার্থীদের
ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে শ্রেণীকক্ষে নানা নেতিবাচক আলোচনা করা এবং একাধিক নারী
শিক্ষার্থীকে বডি শেমিং করার অভিযোগ করেছে।
বিভাগের শিক্ষার্থীদের
সাথে কথা বলে জানা যায়, ক্লাসে পড়ানোর চেয়ে বিবাহিত নারী শিক্ষার্থীদের
ব্যক্তিগত জীবন নিয়েই ক্লাসে নানা আলোচনা করতেই বেশি আগ্রহী এই শিক্ষক।
অভিযোগকারী ব্যাচের এক নারী শিক্ষার্থীকে তিনি ক্লাসে বলেছিলেন, 'জামাইয়ের
সাথে থাকতে থাকতে বালতি হয়ে গেছো।', আবার আরেক নারী শিক্ষার্থী ঢাকায় থাকার
কারণে ক্লাসে অনুপস্থিত ছিলেন। তাকে ক্লাসে দাঁড় করিয়ে অনুপস্থিতির কারণ
জিগ্যেস করলে শিক্ষার্থী ঢাকায় থাকার কারণে ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারেননি
বলে জানান। প্রত্যুত্তরে শিক্ষক জসিম ক্লাসে সবার সামনে সেই শিক্ষার্থীকে
বলেন, তুমি ঢাকা ছিলা, তোমাকে খুললো কে?'
এছাড়া ২০২২ সালে ২১ আগস্ট
বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ৪র্থ সেমিস্টারের ‘বিজনেস স্টাটিস্টিক্স-ও
কোর্সের ভাইবায় এক শিক্ষার্থী পর্দা করায় ‘মৌলবাদী জঙ্গি’ বলে সম্বোধন করে
এবং ভাইবাতে ম্যানার জানেন না বলে হেনস্তা করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগপত্রের
সাথে শিক্ষার্থীরা অভিযোগের প্রমাণস্বরূপ জসিম উদ্দিনের নেয়া দুইটি
কোর্সের রেজাল্ট শিট জমা দেন। দুটি রেজাল্ট শিটের মধ্যে একটি রেজাল্ট শিট
চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের 'ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট'
কোর্সের। কিন্তু নোটিশ বোর্ডে এই রেজাল্ট শিট টানানো হয়েছিল প্রথম বর্ষ
প্রথম সেমিস্টার উল্লেখ করে। 'ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট' কোর্সের
রেজাল্ট শিটে দেখা যায়, ১১৯১৭০৩২, ১১৯১৭০৩৯, ১১৯১৭০৫৮ রোল নম্বরধারী
শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে যায়। এই বিষয়টি
নিশ্চিত হওয়া যায় অভিযোগকারী ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে। কিন্তু
তারা চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারে এসে উপস্থিতিতে নম্বর পেয়েছেন ৪, ২, ৪
নম্বর। অথচ ৪০ নম্বর ইনকোর্সের মধ্যে দুইটি মিডটার্ম পরীক্ষায় পেয়েছেন
০(শূন্য)। আবার এসাইনমেন্ট-প্রেজেন্টেশন মিলিয়ে ১১৯১৭০৩২, ১১৯১৭০৩৯,
১১৯১৭০৫৮ রোল নম্বরধারী শিক্ষার্থীরা পেয়েছেন ১০, ৬, ১০ নম্বর।
এছাড়া
একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সাথে স্নাতকোত্তরের প্রথম সেমিস্টারে ক্লাস
পান শিক্ষক জসিম উদ্দিন। সেখানে 'পোর্টফোলিও স্ট্রেজিস এন্ড ম্যানেজমেন্ট'
কোর্সে তিনি ১৯ জন শিক্ষার্থীকে উপস্থিতিতে দিয়েছেন ০ (শূন্য) নম্বর। তবে
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষক জসিম উদ্দিন ক্লাস নিয়েছেন
মোট ৯ টি। কিন্তু দুইটি ক্লাসে ডাবল এটেন্ডেন্স দিয়েছেন। তাই ক্লাস সংখ্যা
দাঁড়িয়েছে ১১ টিতে। আরো দুইটি ক্লাসে নিয়েছেন মিড। সেই হিসাব মিলিয়ে ক্লাস
সংখ্যা হয় ১৩ টি। আরেকটি ক্লাসে নিয়েছেন শ্রেণী উপস্থাপনা। এই সর্বমোট ১৪
টি ক্লাস স্নাতকোত্তরের প্রথম সেমিস্টারে। এছাড়া স্নাতকের চতুর্থ বর্ষ
প্রথম সেমিস্টার ও স্নাতকোত্তর প্রথম সেমিস্টারে তার নেয়া কোর্সে গড়
নাম্বারিং করারও অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে
ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো:জসিম উদ্দিন বলেন,
'অভিযোগের কিছু না। শিক্ষার্থীরা এসেছিল। এগুলো আমরা বিভাগে সমাধান করেছি।'
তবে লিখিত অভিযোগ বিভাগীয় প্রধান বরাবর দেয়া হয়েছে জানালে তিনি বলেন, 'এটা আপনার বিভাগীয় প্রধানকে জিগ্যেস করেন।'
এ
ব্যাপারে বিভাগটির বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মো. এমদাদুল হক বলেন,
'আমি লিখিত অভিযোগটি পেয়েছি। লিখিত অভিযোগে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে,
অভিযুক্ত শিক্ষককে যেন তাদের কোন একাডেমিক কার্যক্রমে না রাখা হয়। এই বিষয়ে
বিভাগে একটি মিটিং করেছি। সেখানে তাকে উক্ত ব্যাচের সকল কার্যক্রম থেকে
বিরত রাখা হয়েছে।'
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো.
হায়দার আলীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, প্রতিবেদকের কাছ থেকেই তিনি
বিষয়টি প্রথম শুনেছেন। তার কাছে বিষয়টি আসলে দেখবেন।