শনিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
৩০ ভাদ্র ১৪৩১
দোষারোপেকি থামবে বন্যার্তেরহাহাকার?
মোস্তফা হোসেইন
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৪, ১:২২ এএম |

    দোষারোপেকি থামবে বন্যার্তেরহাহাকার?
ভারতের ত্রিপুরারাজ্যে আগেরতুলনায়বৃষ্টিপাতকমেএসেছেশনিবারের পর। আশাকরাযায়, শিগগিরই এর প্রভাবপড়তেশুরুকরবে-কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনীঅঞ্চলে। এরমধ্যে কুমিল্লাবুড়িচংউপজেলারবুরবুরিয়ায় গোমতীনদীরপাড় ভেঙ্গে বাঁধেরউত্তরাঞ্চলেরবিস্তীর্ণ এলাকাপ্লাবিতহয়েছে।শুধু গোমতীনদীররক্ষাবাঁধভাঙলেওহয়তো ক্ষতিটাহতোবুড়িচং এর ৫/৭ মাইলেরমধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতো। মড়ারওপরখাঁড়ার ঘা হিসেবেএরইমধ্যে সালদানদীরপাড়ও ভেঙ্গে গেছে। ফলে গোমতীরপানি ও সালদানদীরপানি এক হয়েবুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়াউপজেলারমানুষকে চরম দুর্ভোগে ফেলেছে। দুদিক থেকে ধেয়েআসাবন্যারপানিএখনওবাড়ছে। যদিওউজানেভারতীয়পাহাড়িএলাকায়বৃষ্টিকমেযাওয়ারসুসংবাদ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশে এমনবন্যারমতো দুর্যোগনতুনকিছুনয়। তবে দেশেরপূর্বাঞ্চলেবন্যা হয় নাবহুবছরধরে। ওই এলাকায়যাদেরবয়স ৩৫/৪০ বছরতারাঅনেকেইবন্যারভয়াবহতা দেখেনি। সাধারণমানুষেরবড়একটি অংশ বন্যানা দেখায়এবংঅতি দ্রুতসময়েরমধ্যে বন্যাবিস্তারলাভকরায়এবারে আতঙ্কটা অন্য সময়ের চেয়েএকটু বেশিছিলো। আগেরবন্যার সঙ্গে এবারেরবন্যায় জনআতঙ্ক বৃদ্ধিরআরেকটিকারণহচ্ছে মোবাইলেরঅবাধব্যবহারএবংআগামসতর্কতারপ্রয়োজনেমাইকিংওভূমিকা রেখেছে। রাতভরমাইকিংকরেমানুষকেসতর্ক করারউপকার যেমনআছে আতঙ্ক ছড়াতেওসক্ষমএটি।
বাংলাদেশেরউত্তর ও উত্তরপশ্চিমাঞ্চলেতিস্তারকারণে যেভাবে ওই এলাকারমানুষপ্রতিবারইবন্যারভয়াবহতা দেখে, বন্যা মোকাবিলায়তাদের যে অভিজ্ঞতাপূর্বাঞ্চলেরমানুষের সেটা নেইঅধিকাংশেরই। নতুনকরেহওয়া এই বন্যায় এই অঞ্চলেরমানুষকেতাইহতবাককরে দেয়। দিশেহারাহয়েযায়মানুষ।
বাংলাদেশেরপূর্বাঞ্চলেবন্যারপ্রধানকারণভারতীয়পাহাড়িএলাকারঅতিবৃষ্টি। এবারওতাই ঘটেছে। ভারতেরআবহাওয়াবিষয়কসরকারিসংস্থা আইএমডির ১৫ থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্তরাজ্যভিত্তিকবৃষ্টিপাতেরহিসাববিশ্লেষণকরে দেখাযায়, এ সময়েত্রিপুরায়গড়ে ৩১৪.৬ মিলিমিটারবৃষ্টিহয়েছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ২৯৮ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের পূর্বে অবস্থিত ভারতেরআরেকরাজ্য মিজোরামে এ সময়বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে ১১৭ শতাংশএবংউত্তরেসীমান্তবর্তীরাজ্য মেঘালয়ে ৬৭ শতাংশ বেশিছিল। উজানের এই বৃষ্টিতেওখানকারমানুষকে চরম ভোগান্তিতে ফেললেওউঁচুভূমিহওয়ায়তাদের দুর্ভোগকমতেসময় বেশিলাগছেনা। কারণপানিনিচেগড়িয়েবাংলাদেশকেতলিয়েদিতেশুরুকরে। যা স্বাভাবিকওবটে। বাংলাদেশেরপূর্বাঞ্চলীয়জনপদ এর প্রভাবেতলিয়ে যেতে থাকে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়াসৃষ্টিহয়েছেবন্যারকারণনিয়ে। সরকারেরএকাধিক উপদেষ্টাভারতকে দায়িকরেছেনবন্যাসৃষ্টিরজন্য। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকআলোচনাহচ্ছে এই বিষয়ে। বলাহচ্ছে ,ত্রিপুরার গোমতীনদীতে গম্বু ‘বাঁধ’- এর গেইট খুলে দেওয়ায়বাংলাদেশে এই ভয়াবহবন্যারসৃষ্টিহয়েছে। এদিকে বিবিসি ২০ আগস্ট একটিসংবাদ পরিবেশনকরে, বাংলাদেশেরপ্রতিক্রিয়াএবংভারতীয় পক্ষের বক্তব্য্উল্লেখকরে। সেখানেত্রিপুরারবিদ্যুৎমন্ত্রীকেবলতে শোনাযায়, ত্রিপুরা গম্বু ড্যাম-এর কোনো গেইটই তারাখুলে দেননি। বিদ্যুৎ‘দফতরেরমন্ত্রীরতনলালনাথ বিবিসিবাংলাকেবলেছেন, “যেপ্রচারটাকরাহচ্ছে ডম্বুর গেট খুলে দেওয়ানিয়ে, সেটাঅপপ্রচারছাড়াকিছুনা।”
“গোমতীজলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোনও গেট খুলে দেওয়াহয়নি। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রেরজলাধারটিরসর্বোচ্চধারণ ক্ষমতা ৯৪ মিটার। জলস্তর এর বেশিউঠলেইনিজের থেকেই জল গেট দিয়ে বেরিয়েযাবে। ...এর মধ্যে একটি গেট দিয়ে ৫০% হারেজল বেরোচ্ছে। সংশ্লিষ্টএলাকারমানুষকেআগে থেকেই মাইকিংকরেসতর্ক থাকারঅনুরোধওজানানোহয়েছিল,”বিবিসিকেবলছিলেনরতনলালনাথ।’
সংবাদ মাধ্যমগুলোতেও দুইভাবেসংবাদগুলোপরিবেশিতহচ্ছে। বাংলাদেশে দেখাযাচ্ছে, এই বন্যাসৃষ্টিরজন্য ভারতই দায়ী। আবারভারতেরসংবাদমাধ্যমগুলোতেবলাহচ্ছে, ভারত কোনো গেইট খুলে দেয়নি। সবচেয়েউল্লেখযোগ্য তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাযায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমবাংলাদেশিব্যবহারকারীরাপ্রায়শতভাগইবলছেন, এটাভারতেরকারসাজি। তারাআগাম কোনোবার্তাপ্রদানকরেনি।’
কিন্তু বিখ্যাতনদীবিশেষজ্ঞ ড. আইনুননিশাত এই বিষয়েবলেছেনভিন্নকথা। ব্র্যাকবিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ডএনভায়রনমেন্টালরিসার্চ এর ইমেরিটাসঅধ্যাপক ড. আইনুননিশাত, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকাকেবলেছেন,‘ভারতে গোমতীনদীরউপরএকটিড্যামরয়েছেএবংচট্টগ্রামেরকাপ্তাইতেওএকটিড্যামরয়েছে। বর্ষা মৌসুমশুরুহওয়ার সাথে সাথেই এ ড্যামগুলোপূর্ণ করা হয়, কারণযত বেশিপানিসংরক্ষণকরাযাবে, তত বেশিবিদ্যুৎউৎপাদনকরা সম্ভব হবে। তবেবর্ষার শেষ দিকেযদি বৃষ্টি হয়, তখনড্যামগুলোআরপানিধরেরাখতেপারেনা।
এই ড্যামগুলোজলবিদ্যুৎউৎপাদনএবংবন্যাপ্রতিরোধেরজন্যওব্যবহৃত হয়। এ কারণেইত্রিপুরাএবংকুমিল্লারনি¤œাঞ্চলে দীর্ঘদিনবন্যাহয়নি। যারকারণে দীর্ঘ ৩০ বছরেকুমিল্লায় কোনোবন্যাহয়নি।
দ্বিতীয়ত, গোমতীনদীরঅববাহিকায়ড্যামটিঅবস্থিত। এর অর্থ হলো এ ড্যামেরকারণে ফেনী, নোয়াখালীকিংবাচট্টগ্রামেরপার্বত্য অঞ্চলেবন্যাহওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কিন্তু গতকালেরপত্রিকা থেকে আমি জেনেছি, এসবএলাকায় ও ত্রিপুরায় ৩০০ মিলিমিটারবৃষ্টিহয়েছে। আর এ অতিবৃষ্টিরকারণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টিহওয়াএকটিনি¤œচাপ। তবেএটিএকটি স্বাভাবিকঘটনা।
...এসব তথ্য বাংলাদেশেরআবহাওয়াঅধিদপ্তরও পেয়েছে। তারাতাদেররাডারেরমাধ্যমে বৃষ্টিরবিষয়টিজানতে পেরেছে। কিন্তু আমাদের কোনোসতর্কবার্তা দেওয়াহয়নি। যদি একদিনআগেওআমাদেরসতর্ক করাহতো, তাহলেআমরানিজেদেরপ্রস্তুত করতেপারতাম।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলাহচ্ছে-গেইট খুলে দেওয়ারআগেভারতবাংলাদেশকেসতর্কবার্তাপ্রদানকরেনি। ভারতবলছে, গেইটই যেখানে খোলাহয়নিবার্তা দেওয়াহবেকি? আর গম্বুতে কোনোবাঁধই নেইআছেড্যাম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদেরআবহাওয়াবিভাগের ব্যর্থতাকিংবা অদক্ষতাসম্পর্কে তেমনকিছুমন্তব্য হয়েছেআমার চোখেপড়েনি।
অত্যন্ত দুঃখজনকহচ্ছে, বাংলাদেশের ফেনী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ারলাখলাখমানুষবাঁচারজন্য লড়াইকরছে। সেইজীবনসংগ্রামেরমাঝখানেচলছেরাজনীতি। এই রাজনীতিকিবন্যার্ত মানুষের দুর্ভোগকমাতেপারবে? এই মুহূর্তে সবচেয়েবড়প্রয়োজনহচ্ছেবন্যার্তদের সহযোগিতা,তাদেরপাশে দাঁড়ানোএবংসাহস দেওয়া। তানাকরেরাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েমানুষকেউত্তেজিতকরাটাকতটুকুশুভতা ভেবে দেখা দরকারবলেমনেকরি।
নিবন্ধেরউপরে উক্ত অংশ পড়েএমনমনেকরারকারণ নেই যে,পানিরাজনীতিতেভারতবাংলাদেশকে দমিয়েরাখার চেষ্টাকরেনি। ৫৪টি অভিন্ননদীতেবাঁধকিংবাড্যামনির্মাণকরেভারতবাংলাদেশকেমরুভূমিহওয়ারদিকেএগিয়েদিচ্ছে। তিস্তা চুক্তি ঝুলিয়েরাখারবিষয়টিওএখানেউল্লেখ্য। ভারতের কেন্দ্রীয়সরকার সম্মত হওয়ারপরওতিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নকরাযাচ্ছে না,পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীমমতাব্যানার্জীরবাধারমুখে। বাংলাদেশ-ভারতসম্পর্কের ক্ষেত্রে এমন ঠেলাঠেলিরবিষয়আমরাআগেও দেখেছি।
ইন্দিরা গান্ধী-বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবছিটমহল চুক্তি করেছিলেন। চুক্তি অনুযায়ীবাংলাদেশ ভারতেরপাওনাবুঝিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু ছিটমহল চুক্তির চূড়ান্তবাস্তবায়নেরজন্য অপেক্ষাকরতেহয়েছেপ্রায়অর্ধশতবছর। বলাহচ্ছিল-ভারতেরপার্লামেন্টে পাসহওয়ারকথা। শেষ পর্যন্ত সেটাপার্লামেন্টে অনুমোদন হয়, কিন্তু তারজন্য দীর্ঘকালঅপেক্ষাকরতেহয়েছে।
এদিকে গঙ্গা চুক্তি নবায়ণেরসময়ঘনিয়েআসছে। আগামীবছরনবায়ণহওয়ারকথা। চলমানবাংলাদেশ-ভারতসম্পর্ক গঙ্গা চুক্তি নবায়ণেকিপ্রভাব ফেলবেতাওবলাযাচ্ছে না। গঙ্গাচুক্তি সম্পাদনকালে দুই দেশেরসুসম্পর্ক ছিলো। হালেজনমতভিন্ন মেরুতে অবস্থানকরছে। এই অবস্থায় গঙ্গাচুক্তির ভবিষ্যৎকিহতেপারেজানা নেই।
ভারতেরপ্রতিবাংলাদেশেরমানুষেরমনোভাবইতিবাচকনয়। এটা স্বীকারকরতেইহবে। সেইকারণেমানুষ ক্ষোভপ্রকাশওকরতেপারে। কিন্তু এই বন্যারসতর্কবার্তাবাংলাদেশ আবহাওয়াবিভাগ থেকে কেনপ্রচারকরাহলোনাতাতলিয়ে দেখতে হবে। ভারত কেনজানায়নিএমনঅভিযোগকরতেগিয়েনিজেরঅবহেলাঢাকলেএমন দুর্ভোগআবারওহবেনা তেমনটাবলাযায়না।
লেখক: সাংবাদিক,মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও শিশুসাহিত্যিক।













সর্বশেষ সংবাদ
দুবাইয়ের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন শাহীন
চান্দিনায় হামলার শিকার আহত যুবকের মৃত্যু
মহাসড়কের তীব্র যানজট; দুর্ভোগ
তদন্তে সম্পৃক্ততা না মিললে মামলা থেকে নাম বাদ পুলিশের নির্দেশনা
মনোহরগঞ্জে র‌্যাবের ত্রাণসামগ্রী বিতরণ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেছেন প্রফেসর মো: আবুল বাশার ভূঁঞা
কুমিল্লা-৫ আসনের সাবেক এমপি এমএ জাহেরের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রতিবাদ
কুমিল্লায়-বেড়েছে চুরি ছিনতাই
কুমিল্লার ১২ শ কিলোমিটার সড়কে বন্যার ক্ষত
কুমিল্লায় ছাত্র আন্দোলনকারীদের উপর হামলাকারী একজন গ্রেপ্তার
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২