কোটা
আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের নিয়ে
মতবিনিময় সভা ডেকেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা ডাকা হয়। তবে
ছাত্রনেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় না করেই সাংবাদিকদের ব্রিফ শুরু করেন তিনি। এ
নিয়ে ব্রিফিংয়ের মাঝেই ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা হট্টগোল করেন। এ সময় সামনের
দিকে বসা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে আওয়াজ করেন। এরপর
অনেকেই একই স্লোগান তোলেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আব্দুর
রাজ্জাককে তার ছেলের সামাজিকমাধ্যমে দেওয়া পোস্ট নিয়ে ‘আপনি এখানে কেন’
বলেও প্রশ্ন করতে শোনা যায়।
বুধবার (৩১ জুলাই) সকাল ১১টায় মতবিনিময় সভায়
অংশ নিতে উপস্থিত হন ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা। তাদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে
কথা বলে জানা যায়, কয়েক শত নেতা উপস্থিত হন যথাসময়ে। তারা সভাস্থলে বসে
ছিলেন। তাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা বা মতবিনিময় না করেই সংবাদ সম্মেলন শুরু
করেন ওবায়দুল কাদের। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রথমে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকেন
সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা, পরে তা হট্টগোলে রূপ নেয়।
কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ
নেতা ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে বলতে থাকেন, মতবিনিময় সভা ডেকে সংবাদ
সম্মেলন করছেন, তাহলে আমাদের ডাকলেন কেন? আগে আমাদের কথা শুনবেন, আলোচনা
করবেন, তারপর ব্রিফ করেন। তা না করে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলা শুরু করে
দিলেন...।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্যক্ষদর্শী নেতারা আরও জানান, এ
নিয়ে হট্টগোল শুরু হলে সংবাদ সম্মেলন অন্যান্য দিনের মতো দীর্ঘ না করে
সভাস্থল ত্যাগ করেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় সামনের দিকে বসা ছাত্রলীগের সাবেক
এক নেতা ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে আওয়াজ করেন, তারপর অনেকেই তার সঙ্গে সুর মেলান।
পরে সাবেক ছাত্রনেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় না করেই আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নিজের
অফিসে চলে যান ওবায়দুল কাদের। এ সময় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের নিচতলা ও
সামনের সড়কে থাকা ছাত্রলীগের সাবেক নেতারাও ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে
থাকেন। একপর্যায়ে এসব নেতা নিজেদের মতো করে চলে যান। এদিকে, আওয়ামী লীগের
সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হলে সাবেক
ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা উচ্চস্বরে বলে ওঠেন, আপনি এখানে কেন এসেছেন? আপনার
ছেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারবিরোধী পোস্ট দিয়েছে কেন? ড. আব্দুর
রাজ্জাক সভাস্থল ত্যাগ করার সময় তাকে ঘিরে ধরে একই রকম কথা বলতে থাকেন
ছাত্রলীগের সাবেক কিছু নেতা। এর মধ্যেই দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন আব্দুর
রাজ্জাক।
এদিন ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় সাবেক
কয়েকজন ছাত্রনেতা সাংবাদিকদের সঙ্গেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। পেশাগত
দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী
লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল আসাদ রাসেলকেও দেখা যায় সেখানে। তাকে
শোকজের নির্দেশ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আসাদকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং ধানমন্ডিতে দলের
সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না দেওয়ার নির্দেশ দেন
তিনি। কিন্তু আজ ওবায়দুল কাদেরের গাড়ির সামনেই অবস্থান নিতে দেখা যায়
‘প্রটোকল বাহিনী’র সদস্য হিসেবে পরিচিত আসাদকে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা
বলার সময় ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আজ আমাদের লড়তে হবে একসাথে। মান-অভিমান
সব ভুলে যেতে হবে। আজ ওই পশুশক্তি যদি আরও প্রশ্রয় পায় তাহলে আমাদের সবাইকে
ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়তে হবে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের
সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন,
জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম,
সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, বন ও
পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনসহ ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা।