মঙ্গলবার ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
২৯ মাঘ ১৪৩১
‘হাসপাতালে গিয়ে দেখি পাখিটার রক্তাক্ত শরীর পড়ে আছে’
জহির শান্ত
প্রকাশ: বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০২৪, ১২:৫৩ এএম |

‘হাসপাতালে গিয়ে দেখি পাখিটার  রক্তাক্ত শরীর পড়ে আছে’


১৯ জুলাই (শুক্রবার) ঢাকার সাভারের রেডিও কলোনি এলাকার বাসা থেকে জুমার নামাজ পড়তে বের হন আল আমিন (২৩)। নামাজ শেষে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার কথা ছিলো তার। কিন্তু আল আমিনের আর বাসায় ফেরা হয়নি। মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। তার পিঠে বুলেট ঢুকে পেট দিয়ে বের হয়ে যায় বলে জানা গেছে। 
নিহত আল আমিন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের মো. বাবুল মিয়ার ছেলে। পরিবারের সঙ্গে থাকতেন সাভারের রেডিও কলোনি এলাকার ভাড়া বাসায়। চাকরি করতেন একই এলাকার একটি ফ্যাক্টরিতে। মারা যাওয়ার পরদিন শনিবার তার মরদেহ গ্রামে নিয়ে আসা হয়। এদিনই জানাজা শেষে দৌলতপুর গ্রামের দক্ষিণ পাড়ায় নানার বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়।
আল আমিনের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে তার পরিবারে। স্বজনদের কান্নায় চোখ ভারি হয়ে আসে পাড়া-প্রতিবেশীদেরও। 
সরেজমিনে আল আমিনের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শোকাতুর পরিবেশের চিত্র। দাফনের এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও সন্তান হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে পারছেন না তার বাবা-মা। ছেলের নানা স্মৃতি মনে করে বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন তারা। তাদের কান্না দেখে সান্ত¦না দিতে আসা প্রতিবেশীদের চোখও ছলছল করে ওঠে এমন বুকফাটা আর্তনাদে।
আল আমিনের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘ওইদিন জুম্মার নামাজ পড়ে ছেলেটার শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার কথা ছিলো। আমি বলেছিলাম চারিদকে অরাজকতা, সাবধানে যাইস বাবা। তার সাথে দুই বন্ধুও ছিলো। নামাজের পর গোলাগুলি হয়- এর মধ্যেই তার শরীরে গুলি লাগে, রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। এরপর আমার পাখিটা আর উঠতে পারেনাই। পিঠে দিয়ে ঢুকে বুলেট পেটে দিয়ে বের হয়। রাস্তায় নাকি কেউ ভয়ে তার লাশ ধরেনি অনেক্ষণ।’ 
তিনি আরো বলেন, ‘কিছুক্ষণ পর তার এক বন্ধু মোবাইলে কল দিয়ে বলে, আল আমিন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আমি বাসা থেকে বের হতে হতে আরেকটা কল আসে, হাসপাতাল থেকে একজন বলছিতেছিল, খালাম্মা আল আমিন মারা গেছে। এসময় চারদিকে আর্তনাদের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার কলিজার টুকরা পাখিটার রক্তাক্ত শরীর পড়ে আছে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘মাত্র ৫ মাস আগে ছেলেটা বিয়ে করেছে। বউটাকে ঘরে তুলে আনতে পারেনাই। এর আগেই আমার ছেলেটাকে খুন করে দিল তারা। ঘরের পাখিকে ২৩ বছর না খেয়ে, না পরে বাঁচিয়ে রেখেছি। টাকা পয়সার জন্য তারে বেশি পড়াশোনাও করাতে পারিনি। পরে কাজ করতে যায়। ইচ্ছে ছিল সংসারের ঋণগুলো শেষ করে আবার পড়াশোনা করবে। ভালো চাকরি পেয়ে সংসারের হাল ধরবে। আর কিছুই হলো না। আমার সব শেষ হয়ে গেলো।’
আল আমিনের বাবা বাবুল মিয়া বলেন, ‘ঘটনার পর আমাকে কেউ একজন কল দিয়ে বলেন, আপনার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে মারা গেছে। আমি বিশ্বাস করিনি। পরে হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার ছেলের মরদেহ পড়ে আছে। শনিবার তার লাশ নিয়ে বাড়ি আসলাম।’
এসময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলতে থাকেন, ‘আমার ছেলে রাজনীতি করে না। এইচ এসসি পরীক্ষা দিয়ে আর পড়াশোনা করেনি। চাকরিতে যোগ দিছিল, পরে আবার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরিকল্পনা করছিল। তার কি অন্যায় ছিল? সে নামাজে গেছে। কোন দোষে তাকে গুলি মারা হলো? এই প্রশ্নের আমি কোনো উত্তর পাই না।’
বরুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নু-এমং মারমা মং বলেন, ঢাকায় সংঘর্ষে বরুড়ার তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মরদেহ বাড়িতে এনে দাফনের পর আমরা বিষয়টি জানতে পেরেছি। এরপর নিহতদের স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করে সার্বিক খোঁজ-খবর নিয়েছি। তাদের কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 













সর্বশেষ সংবাদ
সরকার ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে
অপারেশন ডেভিল হান্ট : কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ১৩ জন
সারা দেশে গ্রেপ্তার ৩৪৩ জন, অস্ত্র উদ্ধার
চান্দিনায় ভোটার হালনাগাদে ‘ফরম’ সংকট
কুমিল্লায় দেড় কোটি টাকার ভারতীয় মোবাইল ফেলে পালিয়েছে মালিক
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লায় আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৩ কর্মী গ্রেপ্তার
কুমিল্লায় ১৮০০ ফুট অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন
ডাকাত দলের তিন মিনিটের মিশন
‘চিহ্নিত আইনজীবীদের’ আদালতে প্রবেশ ঠেকাতে ছাত্র-জনতার অবস্থান
‘অপারেশন ডেভিল হান্টে’ সারাদেশে গ্রেপ্তার ১৩০৮
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২