
আর কয়েকদিন
পরই শুরু হবে মুসলমানদের সিয়াম সাধনার পবিত্র রমজান মাস। শান্তি-সম্প্রীতি ও
সংযমের বার্তা নিয়ে এলেও এই মাস ঘিরে মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের কারণে স্বস্তি
নেই ভোক্তাদের। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তাদের বাড়িয়েছে অস্বস্তি।
সেহরি-ইফতারে প্রশান্তি খোঁজা রোজাদাররা ভুগছেন আরও শঙ্কায়, নিত্যপণ্যের
দামের এই লাগামহীন ঘোড়া যদি আরও ছুটতে থাকে? কী খাবেন, কীভাবে রোজা কাটবে?
রমজানকে
ঘিরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে হাজার হাজার পণ্যের
দামে দেয়া হয় বিশাল ছাড়। পবিত্র এই মাস উপলক্ষে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১০
হাজারের বেশি খাদ্যপণ্যে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
কাতার-ওমানসহ অন্যান্য দেশেও মিলছে এমন ছাড়। তবে বাংলাদেশে বরাবরের মতো
দেখা যাচ্ছে উল্টোটা। রমজান না আসতেই সব পণ্যের দাম ছুটছে ঊর্ধ্বগতিতে।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেল গেল এই উল্টোচিত্র।
পুরান
ঢাকার সূত্রাপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রমজানে বেশি কেনা হয় এমন সব পণ্যের
দাম বেড়েছে। এদিন ছোলার দাম ঠেকেছে ৯০ টাকা কেজিতে। যা কয়েকদিন আগেও ছিল
৮০ থেকে ৮২ টাকা। চিনির দামও ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা কেজি।
বুটের ডাল ও মসুর ডাল ১০-১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়।
পাঁচ
লিটার বোতলের তেলের দাম ৯০০ টাকা। এক কেজি লাল মরিচ কিনলে গুনতে হচ্ছে ৪৫০
টাকা। যা মাসখানেক আগেও ছিল ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। প্রতি কেজি আদা ও
রসুন কিনতে গুনতে হচ্ছে ১৪০ টাকা। আদার কেজি ১৫ দিন আগে ছিল ১২০ টাকা। এ
হিসেবে কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। এক কেজির প্যাকেট পোলাওর চাল ১৭০ টাকায়
ঠেকেছে। যা ২০ দিন বা ১ মাস আগেও ছিল ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়।
পুরান
ঢাকার সুত্রাপুর বাজারের তুষার স্টোরের জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা কী করব
বলেন? দাম তো আমরা বাড়াই না। আমাদের দাম দিয়ে কিনতে হয়। তাই আমরা সেই দাম
থেকে কিছুটা লাভ করে বিক্রি করি। আমাদেরও তো লাভ করতে হবে।’
পণ্যের
দাম বেশি হলে মানুষ কেনাকাটা কম করে জানিয়ে জসিম বলেন, ‘এতে তো আমাদের আরও
লোকসান হয়। আগে দেখা যেত রোজা এলে মানুষ এক মাসের বাজার একসঙ্গে করত,
কিন্তু এখন কোনোরকম এক সপ্তাহ বা ২-৩ দিনের বাজার করছে। এতে আমাদের বিক্রি
আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে।’
একই বাজারে মাংস বিক্রি করেন মোহাম্মদ
আলী। তিনি বলেন, ‘খাসির মাংস ১১৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। যা গত সপ্তাহে
ছিল ১১০০ টাকা। আর বকরির (ছাগলের) মাংস ১০৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, যা গত
সপ্তাহে ছিল ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকা। আর গরুর হাড় ছাড়া মাংস ১ হাজার টাকা
বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে বিক্রি করেছি ৯৫০ টাকা। হাড়সহ মাংস ৭৫০ টাকা
কেজি বিক্রি করছি। গত সপ্তাহেও একই দাম ছিল।’
এই প্রতিবেদক দাঁড়ানো
অবস্থায় ষাটোর্ধ্ব একজন নারী আসেন ২৫০ গ্রাম গরুর মাংস কিনতে। কিন্তু মাংস
বিক্রেতা ২৫০ গ্রাম মাংস বিক্রি করবেন না বলে জানিয়ে দেন তাকে। প্রতিবেদক
ওই নারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কী করবো বাবা, মাংস খাওয়ার অনেক
ইচ্ছা হয়েছে, টাকা-পয়সা একটু কম আছে, তাই এক পোয়া মাংস নিতে আইলাম, কিন্তু
তারা দিল না।’
২৫০ গ্রাম না দেয়ার কারণ জানতে চাইলে মাংস বিক্রেতা
মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘উনি নেবে হাড়সহ মাংস। যদি ২৫০ গ্রাম মাংস দিতে যাই
তাহলে দেখা যাবে একটা বড় হাড়ের ওজনই হয়ে যাবে ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম। তাহলে
১০০ গ্রাম মাংস নিয়ে উনি কীভাবে খাবেন, এ জন্য বিক্রি করিনি।’
মাছের দাম ছুটছেই
মাংস
রেখে ভোক্তা যে মাছ বাজারে যাবেন, সেই জো-ও নেই। সব রকমের মাছের দামই
বাড়তি। ধূপখোলা বাজারের মাছ বিক্রেতা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আজকে ২ কেজি ওজনের
পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহে বিক্রি করেছি ২০০
থেকে ২২০ টাকা কেজি। আর রুই মাছ কেজিতে বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। বড় সাইজের
প্রতি কেজি রুই ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছ। আর অন্যান্য মাছ
কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে।’
অপরিবর্তিত মুরগির দাম
বাজার
ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির সেই চড়া দামই বহাল আছে। শুক্রবার প্রতি
কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়, যা গত সপ্তাহেও এই দামই ছিল।
আর লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০০ টাকা
কেজি।
সবজির মধ্যে করলার দাম ২০ টাকা কমে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০
টাকায়। শিমের দাম অপরিবর্তিতই, বিক্রি হচ্ছে কেজি ৬০ টাকা। পটলের দাম ১০
টাকা কমে ৭০ টাকায়, ঝিঙ্গা ১০ টাকা কমে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলুর দাম
অপরিবর্তিত ৩০ টাকা, টমেটোও আগের দামে ৫০ টাকা, বেগুনও গত সপ্তাহের দামেই
৮০ টাকা এবং চিচিংগা কেজিপ্রতি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাউ প্রকারভেদে
প্রতিটি ৬০ থেকে ৮০ টাকা আর লেবু ৫০ থেকে ৬০ টাকা হালি দরে বিক্রি হচ্ছে।