শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
১২ শ্রাবণ ১৪৩১
পদক-পুরস্কার দিয়া দিমু কিন্তু...
প্রকাশ: শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:৩৬ এএম |


 পদক-পুরস্কার দিয়া দিমু কিন্তু...
তখন আমি ইংল্যান্ড থাকি, লন্ডনে। আমার অভিবাসন প্রক্রিয়া চলছে। হাতে সময় অফুরন্ত। বাসপাশ কিনে বাস চড়ছি আর হাঁটছি আর সারাক্ষন আবিষ্কার করে বেড়াচ্ছি বাঁচবার নতুন জনপদ এবং জীবন্ত-নানামাত্রিক কমিউনিটি। তখন ‘বেতার বাংলা’ নামে একটি কমিউনিটি রেডিওর প্রতিষ্ঠা প্রক্রিয়ায় আমি জড়িত ছিলাম। সেখানে ’প্রবাস বাংলা’ নামে একটি রেডিও শো করেছি দীর্ঘসময়। বেতার বাংলা এবং প্রবাস বাংলা কমিউনিটির মধ্যে বেশ জনপ্রিয় রেডিও-শো ছিল যাতে প্রবাসের সামাজিক-সাংস্কৃতিক নীতি নির্ধারক-সংগঠক-কর্মীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে আলাপ আলোচনা করতাম। অনেক শ্রোতা ছিল আমাদের। আর আমার জন্য সেটাই ছিল প্রথম বেতার সাংবাদিকতার চর্চা। টানা দুই বছর করেছি সেই শো। তারপর ছেড়ে দিয়েছি সেই শো-প্রতিষ্ঠান যার দুঃখজনক প্রেক্ষাপট অন্য জায়গায় লিখবো কখনো।
সেই বেতার অনুষ্ঠানে আমার প্রথম দিকের অতিথিদের মধ্যে একজন ছিলেন শফিক মিঞা। তিনি বিএনপি ঘরানার মানুষ হলেও ‘শিক্ষাকর্মী’ হিসেবেই মূলত নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সিলেটের উদার দিলখোলা হাসিখুশি মানুষ শফিক ভাইয়ের সাথে একটি আলাপ আমার নানা কারণেই মনে থাকে।
একবার পূর্ব লন্ডনে শফিক ভাইয়ের সাথে হাঁটতে হাঁটতে আলাপ হচ্ছে। উনি বলছিলেন বাংলাদেশ থেকে আগত নানা ক্ষেত্রের সেলিব্রেটি (!?!) মানুষদের বিলেত আগমন এবং তৎপরতা নিয়ে। বলছিলেন এরা এখানে এসেই পাগল হয়ে যায় অনুষ্ঠানে অতিথি হওয়ার জন্য আর পদক পুরস্কার পাওয়ার জন্য। শফিক ভাই হাসতে হাসতে বলছিলেন-যেমন কুকুর তেমন মুগুর। আমরাও পদক-পুরস্কার রেডি রাখি। মানে কতগুলো সস্তা পদক-ক্রেস্টজাতীয় জিনিস বানিয়ে রাখেন আগেই। একটা জায়গা শূন্য রাখেন, ব্যক্তির নামটা শুধু পরে বসিয়ে দেন। আমার তাজ্জব বোধ-চোখকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে শফিক ভাই পুরো বিষয়টি সেদিন বর্ণনা করেছিলেন। শেষে বলেছিলেন-আপনার কাছে কোন (সেলিব্রেটি!?!) বন্ধু মানুষ আসলেও জানাবেন, আমরা তাকেও কিন্তু একটা পদক-পুরষ্কার দিয়ে দেব।
সেই থেকে এই ধরণের পদক-পুরস্কারের কবল থেকে আমি নিজেও পালিয়ে বেড়াচ্ছি। প্রায় একযুগ আগে প্রবাস জীবনের পাঠ চুকিয়ে দেশে ফিরে আমরা যে কুমিল্লা সংস্কৃতি উৎসব শুরু করেছিলাম সেখানে শুরু থেকেই ঘোষণা হয়েছিল যে উৎসবটি হবে সম্পূর্ণত পদক-পুরস্কার মুক্ত। জেনেছি যে পদক পুরস্কারের একটি ভয়াবহ বিশ্রী সামন্ত সংস্কৃতি আমাদের সমাজে বহমান আছে। এই কারণে নিজেকে এবং আমার সাংগঠনিক তৎপরতাগুলো এই পদক-পুরস্কার মুক্ত রাখতেই চেষ্টা করি। এবং খুব ভয়ে ভয়ে থাকি যে কেউনা আবার নিজের ক্ষেত্রেও এই কর্মটি করতে আসে। আসেনি তা নয় কিন্তু খুব বিনীতভাবে প্রত্যাখ্যান করে বলেছি যে পদকটি আপনারা অন্য কাউকে দিন যিনি এটি পেয়ে খুব খুশি হবেন। এইসব কাহিনী জেনে আমি নিজেকেও খুব মলিন-জৌলশহীন-পলাতক এবং হাফপ্যান্টধারী রাখতে চেষ্টা করে চলেছি যাতে আমাকে কখনোই একটি পদক পাবার যোগ্য মনে না হয়। এটি কিন্তু হাসির কোন কথাই নয়-সত্যি।
আমি জানি চাহিদা-সরবরাহের বাজারি সূত্রে আমাদের সমাজে এখন শুধু পদক প্রত্যাশী নয় বরং পদক প্রদানকারী ব্যক্তি/সংস্থার সংখ্যা বেশি যারা পদক নিয়ে রীতিমত ঘুরছেন আর (আঞ্চলিক ভাষায়) বলছেন-একটা পদক-পুরস্কার দিয়া দিমু কিন্তু...


 












সর্বশেষ সংবাদ
কুমিল্লায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন,আটক ৩
স্বাগত ২০২৩: অকল্যান্ডে আতশবাজির মধ্য দিয়ে বর্ষবরণ
কুমিল্লায় অভাবের তাড়নায় মা-মেয়ের আত্মহত্যা
সাবেক পোপ বেনেডিক্ট মারা গেছেন
কুমিল্লায় নির্মানাধীন ভবনের প্রহরীর মরদেহ উদ্ধার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লায় অভাবের তাড়নায় মা-মেয়ের আত্মহত্যা
কুমিল্লায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন,আটক ৩
মাহির মনোনয়ন নিয়ে যা বললেন ডা. মুরাদ
স্কুলে ৪ শ্রেণিতে এবার নতুন শিক্ষাক্রম
আওয়ামী লীগ ১২ স্বতন্ত্র ৫
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২ | Developed By: i2soft