ঢাকার কেরানীগঞ্জে প্লাস্টিক সামগ্রী তৈরির একটি কারখানায় আগুন লেগে একজনের মৃত্যু হয়েছে, দগ্ধ হয়েছেন আরও অন্তত ৩৪ জন। বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় প্রাইম পেট অ্যান্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কারখানায় আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দশটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে বলে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ডিজি সাজ্জাদ হোসেন জানান।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত কেরানীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, কারখানার ভেতর থেকে আনুমানিক ২৭ বছর বয়সী একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে লাশ সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়ায় তার পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
তিনি বলেন, “ঠিক কতজন দগ্ধ হয়েছেন সেই সংখ্যা এখন নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।”
দগ্ধদের মধ্যে ৩৪ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে জানিয়ে মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, “তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ”
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি শাহজামান বলেন, ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর কারখানার ভেতরে ডাম্পিংয়ের কাজ করছেন। তবে কীভাবে সেখানে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
একতলা টিনশেড ওই কারখানায় ওয়ান টাইম প্লেট, কাপসহ প্লাস্টিকের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করা হত। কোম্পানির মালিকের নজরুল ইসলাম। আল-আমিন নামে একজন ওই কারখানার ম্যানেজার।
কারখানার ভেতরে আর কারও মৃতদেহ নেই বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান। যারা দগ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছেন, তাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম জানা গেছে।
এরা হলেন- ফয়সাল (২৯), জাহাঙ্গীর (৫২), শফিকুল (২৭), বসির (২০), ফয়সাল (৩৫), দুর্জয় সরকার (১৭), সুমন ইসলাম (২৫), মেহেদী (২০), আসাদ (২৩), মো. সিরাজ (৫০), সাজিদ (২৯), জিনারুল হোসেন (৩২), সাখাওয়াত (৩০), আবু সাইদ (১৬), সোয়ান (২২), মো. বাবুল (২৫), জাকির হোসেন মাতব্বর (২২), মো. আলম (২২) ও আব্দুর রাজ্জাক (৪২) ।
আগুন লাগার কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ জানতে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা সাইফুল জানিয়েছেন।
অগ্নিদগ্ধ ৩৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক:
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে প্লাস্টিক কারখানায় অগ্নিকা-ের ঘটনায় দগ্ধ ৩৪ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন এ ইউনিটের জাতীয় সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন। সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন, এই ব্যক্তিদের সর্বনিম্ন ৩০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাঁদের সবারই শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। বুধবার বিকেলে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হিজলতলা এলাকায় ‘প্রাইম প্যাক প্লাস্টিক’ নামের একটি কারখানায় অগ্নিকা-ের এ ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। কারখানাটিতে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের গ্লাস, প্লেট ও খাবারের প্যাকেট তৈরি হতো।
সন্ধ্যার পর ঢাকা মেডিকেলে রোগীদের দেখতে আসেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ওই কারখানার কোনো অনুমোদন ছিল না। কারখানাটি কীভাবে সেখানে হলো, সে ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে। ঢাকা মেডিকেলে আসার আগে তিনি দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
সরেজমিনে ঢাকা মেডিকেলে আহত ব্যক্তিদের স্বজনদের ভিড় ও আর্তনাদ লক্ষ করা গেছে। এ সময় সাহেরা বেগম নামের এক নারীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়েছে। তিনি জানান, তাঁর দশম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে ওই কারখানায় মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করে। চার বছর ধরে সে ওই কারখানায় কর্মরত। আজ দুর্ঘটনার পরপরই কারখানার লোকেরা তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসে। তার শরীরও পুড়ে গেছে। তাদের গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামে।