নিজস্ব
প্রতিবেদক।। যথাযোগ্য মর্যাদা ও বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা আর বীর
মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা জানানোর মধ্য দিয়ে কুমিল্লা সেনানিবাসে সশস্ত্র
বাহিনী দিবস উদযাপিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় কুমিল্লা
সেনানিবাসের শহীদ এমআর চৌধুরী গ্রাউন্ডে দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে সংবর্ধনা
অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
জাতীয় ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবময় অর্জন স্বাধীনতা
এবং মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের কথা তুলে ধরে কুমিল্লা সেনাবাহিনীর
৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমা-িং (জিওসি) ও কুমিল্লা এরিয়া কমা-ার
মেজর জেনারেল আহম্মদ তাবরেজ শামস চৌধুরী বলেন, দেশের যেকোন প্রয়োজনে
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী তথা সেনাবাহিনী সবসময় সরকার ও জনগণের পাশে সততা ও
নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। যেখানেই বাংলাদেশ
সেনাবাহিনী নিয়োজিত হয়েছে সেখানেই দেশপ্রেম ও আস্থার সাথে সেনাবাহিনী
দায়িত্ব পালন করে প্রশংসিত হয়েছে। দেশরক্ষায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা,
অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অনন্য ভূমিকা
অব্যাহত রাখতে আমরা বদ্ধ পরিকর।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার
পরিবারবর্গ, মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, মন্ত্রী, সংসদ সদস্যবৃন্দসহ আমন্ত্রিত
অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান সেনাবাহিনীর ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার
কমা-িং (জিওসি) ও কুমিল্লা এরিয়া কমা-ার মেজর জেনারেল আহম্মদ তাবরেজ শামস
চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মহান মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লা অঞ্চলে অসীম
সাহসিকতা, আত্মত্যাগ, সহযোগিতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য খেতাবপ্রাপ্ত ও
শহীদ মুক্তিযোদ্ধার ১০ পরিবারকে সম্মাননা জানানো হয়। সেই সাথে জানানো হয়
অন্তত ৬শ জন মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারবর্গকে সম্মননা। দেশের স্বাধীনতার
জন্য তাদের আত্মত্যাগের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সকল বীর
শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার
কমা-িং (জিওসি) ও কুমিল্লা এরিয়া কমা-ার মেজর জেনারেল আহম্মদ তাবরেজ শামস
চৌধুরী। পরে আমন্ত্রিত অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক
পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি,
শাহজাহান কামাল এমপি, শফিকুর রহমান এমপি, নিজাম উদ্দিন হাজারি এমপি, বিএম
ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম এমপি, রওশন আরা মান্নান এমপি, আঞ্জুম সুলতানা সীমা
এমপি, বিভিন্ন জেলার মুক্তিযোদ্ধা কমা-ার ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো.
আবুল ফজল মীর, পুলিশ সুপার সৈয়দ মো. নুরুল ইসলামকে নিয়ে সশস্ত্র বাহিনী
দিবসের কেক কাটা হয়।
অনুষ্ঠানে কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক
আলহাজ¦ মো. ওমর ফারুক, আওয়ামীলীগ নেতা মফিজুর রহমান বাবলু, সফিকুল ইসলাম
শিকদারসহ কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী
জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন সামরিক-অসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা ও
বিভিন্ন শ্রেণী- পেশার বিশিষ্ট-জনেরা, দৈনিক কুমিল্লার কাগজ সম্পাদক আবুল
কাশেম হৃদয়সহ সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে অতিথিদের আপ্যায়ণ করা হয়।
সংবর্ধনা
অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে কুমিল্লা এরিয়া কমা-ার মেজর জেনারেল আহম্মদ
তাবরেজ শামস চৌধুরী বলেন, আমাদের জাতীয় ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবময় অর্জন আমাদের
স্বাধীনতা। ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সূচিত বাঙালি জাতির স্বাধীকার
আন্দোলন, ক্রমান্বয়ে ছয় দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের
নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় লাভ এর মধ্য দিয়ে এক সার্বজনীন সংগ্রামের রূপ ধারণ
করে। যা মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে পরিপূর্ণতা লাভ করে। এ
অর্জন দেশের আপামর মুক্তিকামী জনতার সাথে সশস্ত্র বাহনীর আত্মত্যাগের ফসল।
৩০ লক্ষ শহীদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ অনন্তকাল আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে
ভালোবাসা ও সেবার দিক নির্দেশনা হয়ে থাকবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। আমাদের
সশস্ত্রবাহিনী ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সময় ৭১ এর ২১শে নভেম্বর
দিনটিতে মুক্তিবাহিনীর সাথে সশস্ত্রবাহিনী সম্মিলিতভাবে দখলদার বাহিনীর উপর
সর্বাত্মক আঘাত হানে। তাই এই দিন জাতির কাছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
দিন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে কুমিল্লা অঞ্চলের মুক্তিকামী আপামর জনতার
সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের উদাহরণ চির ভাস্বর। ১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ কুমিল্লা
সেনানিবাসে সমস্ত বাঙালী সেনা কর্মকর্তা সেনা সদস্যবৃন্দ এবং সেনানিবাসে
অবস্থিত অসামরিক ব্যক্তিবর্গকে পাক হানাদার বাহিনী অতর্কিত হামলা চালিয়ে
অন্তরীণ করে ফেলে। অন্তরীণ করা হয় সেনানিবাস এলাকা এবং কুমিল্লা শহরের অনেক
গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকেও। অতঃপর শুরু হয় এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। সবচেয়ে বড়
হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় কুমিল্লা সেনানিবাসে। ২৪ জন সামরিক কর্মকর্তা ৩শ জন
বিভিন্ন পদবীর সেনা সদস্য ও ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল ও কলেজের ১১জন শিক্ষকসহ
সেনানিবাসে অবস্থানকারী প্রায় ৫শ জন ব্যক্তিকে সেদিন বর্বর পাক হানাদার
বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে। বিভিন্ন স্থানে হত্যাকা- চালিয়ে তারা অনেক
মৃতদেহ এই মাঠের পূর্ব পাশে গণকবর দেয়। যা বর্তমানে এই সেনানিবাসের
একাত্তরের বধ্যভূমি স্মৃতি স্তম্ভ হিসেবে সংরক্ষিত আছে।
তিনি বলেন,
দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি আমাদের স্বাধীনতা।
বহুল আকাঙ্খিত স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে প্রথম সরকার আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে
শুরু হয় দেশ গড়ার কাজ। সে কাজ ছিলো সঙ্কটপূর্ণ ও বন্ধুর। শূন্য হাতে দেশ
গড়ার কাজ শুরু হলেও সঠিক নেতৃত্ব ও দেশপ্রেম দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার
পুনর্বার সূচনা করে। দেশ আজ শক্ত অর্থনীতির ভিত্তির উপর স্বগৌরবে
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং এই অগ্রযাত্রা বজায় থাকবে ইনশাআল্লাহ।
জাতীয়
উন্নয়নে সামরিক বাহিনীর উল্লেখযোগ্য ভূমিকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন,
কাক্সিক্ষত পদ্মাসেতু নির্মাণে সেনাবাহিনী অকান্ত কাজ করে যাচ্ছে। দেশের
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ফাইওভার নির্মাণে
যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে। এক্ষেত্রে ২য় মেঘনা-গোমতি সেতু, মহিপাল ফাইওভার,
চট্টগ্রামের বদ্দারহাট ফাইওভার সহ ঢাকার বেশ কয়েকটি ফাইওভার উল্লেখযোগ্য।
সেনাবাহিনী শিক্ষার কথা বিবেচনা করে ইতিমধ্যে ৪টি বিশ্ববিদ্যালয় ও ৫টি
মেডিকেল কলেজ ও দুইটি নার্সিং কলেজ স্থাপন করেছে। আরো ৩টি নার্সিং কলেজ ও
৫টি ডেন্টাল কলেজ স্থাপন পরিকল্পনাধীন। দেশের বিভিন্ন সংকটকালে সেনাবাহনী
নি:শর্তভাবে এগিয়ে এসেছে। এমনকি দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে সামরিক
বাহিনীর ভূমিকা অনস্বিকার্য।