মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০
কুমিল্লার সেই কলঙ্কিত তিন বাড়ি
আবুল কাশেম হৃদয়, কুমিল্লা
প্রকাশ: সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০১৬, ১০:২৮ পিএম আপডেট: ২৩.০৯.২০১৯ ৮:৫১ পিএম |

কুমিল্লার সেই কলঙ্কিত তিন বাড়ি(এই সংবাদটি ২০১৪ সালে প্রকাশিত)


আবুল কাশেম হৃদয়, সম্পাদক, দৈনিক কুমিল্লার কাগজ ::
বাঙালি জাতির ইতিহাসে কলঙ্কের চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কুমিল্লার তিনটি বাড়ি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনিরা থাকতেন এই বাড়িগুলোতে। কুমিল্লার দাউদকান্দির দশপাড়ায় খোন্দকার মোশতাক আহমেদ বাড়ি, চান্দিনার ছয়ঘড়িয়ায় কর্ণেল আবদুর রশিদ খোন্দকারের বাড়ি আর মেজর শরিফুল হক ডালিম কুমিল্লা শহরের অশোকতলার যে বাড়িতে থাকতো সেই বাড়ি। খোন্দকার মোশতাক আহমেদ মারা গেলেও কর্ণেল আবদুর রশিদ খোন্দকার আর মেজর শরিফুল হক ডালিম কোথায় আছে তা জানে না সরকারও। কিন্ত তাদের বসবাসের এই বাড়িগুলোতে সেই সব খুনিরা বা তাদের উত্তরাধিকাররা না থাকলেও বাড়িগুলো বহন করছে অভিশাপের চিহ্ন। কুমিল্লাকে কলঙ্কিত করা এসব বাড়িগুলোকে লক্ষ্য করে মানুষ এখনো ঘৃণা জানায়। ঘৃণা জানিয়ে কুমিল্লার মানুষ জাতির জনক হত্যার কলঙ্ক যেন মোচন করতে চায়।

খোন্দকার মোশতাক আহমেদের বাড়ি

1

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত সাবেক রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাক আহমেদের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দির সুন্দলপুরের দশপাড়ায়। চারদিকে দেয়াল ঘেরা বিশাল ঐ বাড়িতে দোতলা একটি বিল্ডিং রয়েছে। রয়েছে একটি মসজিদ ও পারিবারিক কবরস্থান। কবরস্থানের কবরগুলোতে সাইনবোর্ডে নাম পরিচয় থাকলেও মোশতাক আহমেদের কবরে কোন সাইনবোর্ড নেই। সেটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বাঁশ দিয়ে ঘেরা ঐ কবরের বেরিতে সবুজ রং করা আছে।
দোতলা ঐ বাড়ির নীচতলায় মসজিদের ইমাম ও মাজারের একজন খাদেম ছাড়া সেখানে এখন তাদের কেউ থাকে না। খোন্দকার মোশতাক আহমেদের এক ছেলে খোন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ আমেরিকায় এবং মেয়ে খোন্দকার শিরিন সুলতানা এবং ডা. খোন্দকার নাজনিন সুলতানা লন্ডনে থাকেন। তাদের পরিবারের সদস্যরা মাঝে মধ্যে দশপাড়ায় সেই বাড়িতে আসেন। দোতলা বাড়িটির পাশেই রয়েছে দশপাড়া হযরত কবির উদ্দিন সিনিয়র কামিল মাদ্রাসা। আত্মস্বীকৃত খুনি মোশতাক ১৯৯৫ সালে মারা যান।
এদিকে খোন্দকার মোশতাক আহমেদের বাড়ি আগামী ১৬ আগষ্ট ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দিয়েছেন দাউদকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান মেজর মোহাম্মদ আলী সুমন।
তিনি জানান, খুনি মোশতাকের প্রতি ঘৃণা জানাতে আমরা তার বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচি দিয়েছি। ১৬ আগষ্ট বিকাল ৩টায় দাউদকান্দির শহিদনগরের ট্রমা সেন্টারের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে মোশতাকের বাড়ি ঘেরাও করে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাবো।

কর্নেল অব. আবদুর রশিদ খোন্দকারের বাড়ি

2

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার আরেক আত্মস্বীকৃত খুনি লে. কর্নেল অব. আবদুর রশিদ খোন্দকারের কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ছয়ঘড়িয়া গ্রামের বাড়িটি এখন জনশূন্য। ১৪ জুন তার সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সরকারের পক্ষে কুমিল্লা জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হাসানুজ্জামান কল্লোলের নির্দেশে এবং চান্দিনা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উপস্থিতিতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি রশিদের বাড়িসহ ৬ দশমিক ১২ একর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ৬টি সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিয়েছে চান্দিনা থানা পুলিশ। এর মধ্যে তার বাবার আব্দুল করিমের সম্পত্তিও রয়েছে।
সরেজমিনে আবদুর রশিদ খোন্দকারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় জনশূন্য অবস্থায় পড়ে আছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুনির একতলা বাড়িটি। এই বাড়িসহ ছয়ঘরিয়া-করতলা-পানিপাড়া ও থানগাঁও মৌজার ৬ দশমিক ১২ একর সম্পত্তিতে ‘তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি সরকারের বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি, ওই সম্পত্তিতে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ’ লেখা সম্বলিত সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়েছে।
এক সময় এই বাড়িটি পাহাড়া দিতেন কেয়ারটেকার অব: সার্জেন্ট সাইফুল। এক এগারোর পটপরিবর্তনের সময় থেকে তার মেয়ে মেহনাজ রশিদ খোন্দকার ছাড়া এই বাড়িতে তার পরিবারের আর কেউ আসতো না। মেহনাজ রশিদ একেরপর এক মোবাইল এর সীম পরিবর্তন করতো। কেয়ারটেকার সাইফুল বাসভবনের পাশে অবস্থিত একতলা বিল্ডিং এ স্বপরিবারে বসবাস করতেন। তিনি ছিলেন ৩ হাজার টাকায় মাসিক বেতনভুক্ত কর্মচারী।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করার পর স্বাধীনভাবে এই বাড়িতে বসবাস করলেও ১৯৯৬ সনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ তথা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করার পরপরই দেশত্যাগ করে আবদুর রশিদ খোন্দকার। এর আগে ১৯৯৬ এর ১৫ ফেব্রুয়ারি বিতর্কিত নির্বাচনে অংশ নিয়ে আবদুর রশিদ খোন্দকার এমপিও হয়েছিলো। ১৯৯৬ এ দেশ ত্যাগ করে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি আবদুর রশিদ খোন্দকার আর দেশে আসতে পারেনি।
তবে কর্ণেল রশিদের কন্যা মেহনাজ রশিদ খোন্দকার বিদেশ থেকে বাংলাদেশে এসে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ছয়ঘরিয়ার বাজেয়াপ্ত করা সেই বাড়িতে ওঠেছিল।দীর্ঘদিন এই বাড়িতে থেকেছে এবং মাঝে মধ্যে ঢাকার বাড়িতে থাকতো। পরবর্তীতে বাড়িটিতে আর্ক কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার লিখে সাইনবোর্ড টানিয়ে বাড়িটিকে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে তার দখলে রেখেছিল এবং বিভিন্ন মাধ্যমে লোকবল তৈরি করে ২০০৮ এর ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চান্দিনা আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়ে এলাকাছাড়া হয় সে। পরে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যায় মেহনাজ। এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার সাথে তা ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ উঠে। বর্তমানে সে জামিনে আছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক হাসানুজ্জামান কল্লোল জানান, আবদুর রশিদ খোন্দকারের ঐ সব সম্পত্তি এখন সরকারের বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি, ওই সম্পত্তিতে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ কথা লিখে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে ঐ সম্পত্তি জনকল্যানে ব্যবহৃত হবে।

লে. কর্ণেল অব. শরিফুল হক ডালিম থাকতো যে বাড়িতে

3
অপরদিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার আরেক আত্মস্বীকৃত খুনি লে. কর্ণেল অব. শরিফুল হক ডালিম তার বাবার চাকরির সুবাদে কুমিল্লায় পড়াশুনা করতো। সে ছিলো কুমিল্লা জিলা স্কুল এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্র। তার বাবা কুমিল্লা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ছিলেন। সে কারণে তারা থাকতেন কুমিল্লা শহরের অশোকতলা চৌমুহনীর ১৪৯ নম্বর দোতলা সরকারি বাড়িটিতে। তারপর সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার পর সে ছিলো কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে।অশোকতলার সে বাড়িটি দেখলে এখনো কুমিল্লা মানুষের মনে পড়ে যায় সেই ধিক্কৃত লে. কর্ণেল অব. শরিফুল হক ডালিম ওরফে মেজর ডালিমের কথা। অশোকতলার ঐ দোতলা বাড়িতে স্বাধীনতার পর উপর তলায় মৎস্য কর্মকর্তা এবং নিচতলায় খাদ্য কর্মকর্তা থাকতেন। এখন সেখানে থাকে কুমিল্লার বিশিষ্ট শিল্পী প্রয়াত নাসির আহমেদ এবং তার পরিবার।
সঙ্গীত শিল্পী পল্লব জানান, ১৯৮৫ সাল থেকে তারা বাড়িটি লিজ নিয়ে সেখানে থাকেন। এর আগে সরকারি কর্মকর্তারাই থাকতেন।
কুমিল্লার এই তিনটি বাড়ি এখন ইতিহাসের ঘৃণিত সাক্ষি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আছে অভিশাপের বোঝা নিয়ে। বাড়িগুলো দেখে কুমিল্লার মানুষের ঘৃণা প্রকাশ ছাড়া আর কি বা করা আছে।












সর্বশেষ সংবাদ
লেবাননে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশি নারীর মৃত্যু
বছর শেষে সৃজিতের চমক
২০২০ সাল বদলে দেবে যে ৬ স্মার্টফোন
যেভাবে রাঁধবেন নারিকেল দুধে কই মাছ
অবৈধদের ফেরত না পাঠানোর লিখিত আশ্বাস চায় বাংলাদেশ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
পিইসি-জেএসসি জেডিসির ফল প্রকাশ আজ
কুমিল্লার দুই ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়ী
অবৈধদের ফেরত না পাঠানোর লিখিত আশ্বাস চায় বাংলাদেশ
কুমিল্লায় ইউপি নির্বাচনে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ৫
লেবাননে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশি নারীর মৃত্যু
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২ | Developed By: i2soft