ঋণ
জালিয়াতির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে ব্যাংকটির
সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হুমায়ুন কবিরসহ ৯ জনকে ১৭ বছর করে
কারাদণ্ড ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি বন্ধ করতে ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারবে কি
না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত কথা বলা কঠিন। তবে স্বীকার করতে হবে যে এর মাধ্যমে
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তৎপরতা কিছুটা হলেও দৃশ্যমান হয়েছে।
ঋণ
জালিয়াতির মামলায় ঢাকার বিশেষ আদালত-৫-এর বিচারক মো. ইকবাল হোসেন গত বুধবার
এ রায় দেন। দণ্ডিত ৯ আসামি হলেন সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হুমায়ুন কবির,
উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মাইনুল হক, মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ননী
গোপাল নাথ, উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শেখ আলতাফ হোসেন, সফিজ উদ্দিন আহমেদ,
সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) সাইফুল হাসান, কামরুল হোসেন খান, প্যারাগন
নিট কম্পোজিটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম (রাজা) ও পরিচালক
আবদুল্লাহ আল মামুন।
মামলার নথিপত্র অনুযায়ী, সোনালী ব্যাংকের ২৭ লাখ ৫০
হাজার ৬৮১ টাকা আত্মসাতের দায়ে দুদক ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি আসামিদের
বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলাটি তদন্ত করে ২০১৪ সালের ২২ মে আদালতে অভিযোগপত্র
দাখিল করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মশিউর রহমান।
এর আগে গত বছরের ২৬
নভেম্বর ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা
আত্মসাতের দায়ে সাবেক এমডি হুমায়ুন কবিরসহ ১১ জনকে ৩ থেকে ৮ বছরের কারাদণ্ড
দেন আদালত। এ ছাড়া ব্যাংকটির ঋণ জালিয়াতির আরেক মামলায় ২০১৬ সালে সাবেক
এজিএম সাইফুল হাসানসহ তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। সোনালী ব্যাংকের ঋণ
জালিয়াতির আরও অনেক ঘটনা ঘটেছে। এই ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে ৩ হাজার
৬০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায়, যা হলমার্ক কেলেঙ্কারি নামে
পরিচিত, এখনো কেউ শাস্তি পাননি। আবার অন্য অনেক সরকারি–বেসরকারি ব্যাংকে বড়
বড় ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও
অজ্ঞাত কারণে বিচারপ্রক্রিয়া থমকে আছে। দুদকের মামলায় সোনালী ব্যাংকের
সাবেক এমডিসহ ৯ জনের শাস্তি হয়েছে; কিন্তু বেসিক ব্যাংক থেকে যাঁরা কোটি
কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন, তাঁরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছেন।
এমনকি যেসব ব্যাংকের অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সোচ্চার
ছিল, তাঁরাও অজ্ঞাত কারণে দায়মুক্তি পেয়ে গেছেন।
ব্যাংকিং খাতে যে ভয়াবহ
দুর্নীতি ও জালিয়াতি চলছে, উল্লিখিত মামলাগুলো তার সামান্য উদাহরণ মাত্র।
প্রতিবছরই বিভিন্ন ব্যাংকে জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের বহু ঘটনা ঘটে, যার
বেশির ভাগই ধামাচাপা দেওয়া হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক,
বেসিক ব্যাংক ও বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংকে গুরুতর আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা
ঘটলেও পদাধিকারীদের কারও শাস্তি না হওয়া দুঃখজনক। দুদকের মামলায় সোনালী
ব্যাংকের সাবেক এমডি হুমায়ুন কবিরসহ কয়েকজন কর্মকর্তা শাস্তি পেয়েছেন।
কিন্তু হুমায়ুন কবিরসহ এখনো পাঁচ আসামি পলাতক। তাঁদের খুঁজে বের করে শাস্তি
নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। দৃষ্টান্ত হিসেবে কেবল একটি–দুটি নয়,
ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে ছোট-বড় সব আর্থিক কেলেঙ্কারির
হোতাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।