Published : Thursday, 11 November, 2021 at 12:00 AM, Update: 11.11.2021 1:18:41 AM

আজ
১১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার স্বাধীনতা যুদ্ধের অগ্রসৈনিক ইস্ট বেঙ্গল
রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা এবং ভাষা আন্দোলনের সূচনা সৈনিক সাবেক প্রাদেশিক
আইন পরিষদের সদস্য জাতীয় বীর মেজর এম এ গণির ৬৫তম মৃত্যু দিবস। বাঙালি
জাতির অস্তিত্ব নির্মাণে, বাঙালির আত্মজাগরণ ও জাতির সমর-সত্তার বিকাশে
মেজর আবদুল গণির কীর্তি ও অবদান অবিস্মরণীয়। ইতিহাসের এক ক্রান্তিলগ্নেব
তিনি জাতির অন্যতম ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন।
এই বীর সৈনিকের
৬৫তম মৃত্যু দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস
অফিসার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন (রাওয়া), মেজর গণি পরিষদ ও তার পরিবারের পক্ষ
থেকে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। কুমিল্লা সেনানিবাসে তাঁর সমাধি
সৌধে বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধা জানানোর
অনুষ্ঠান প্রতি বছর পালিত হয়। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে মরহুম গণির
স্মরণে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এতে বিশিষ্ট
ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কুমিল্লা-৫
(বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) এর মাননীয় সংসদ সদস্য এডভোকেট আবুল হাসেম খান।
মেজর
গণির স্ত্রী বেগম আছিয়া গণি প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর দুই ছেলে কর্নেল (অব.)
তাজুল গনি ও লে. কর্ণেল (অব.) খালেদ গণি বর্তমানে বিদেশে বসবাস করেন। তিন
কন্যা মাহমুদা বেগম, হাসিনা বেগম ও প্রয়াত সাজেদা বেগম। দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধে বাঙ্গালী সৈন্যদের বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ে অনুপ্রাণিত হয়ে মেজর গণি
তৎকালীন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কমাণ্ডার জেনারেল স্যার মেসারভিকে এক
আবেদনপত্রে বাঙ্গালী মুসলমানদের নিয়ে একটি আলাদা রেজিমেন্ট গঠনের দাবি
উপস্থাপন করেন। তার এই যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে সে সময় স্যার মেসারভি মেজর
গণির এ দাবি বাস্তবায়নে সহায়তা করেছিলেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাঁজা
নাজিমউদ্দিনের কাছেও মেজর গণি বেঙ্গল রেজিমেন্ট গঠনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন।
অক্লান্ত পরিশ্রম শেষে মেজর গণি ১৯৪৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ইস্ট বেঙ্গল
রেজিমেন্টের অগ্রযাত্রা শুরু করেন।
মেজর আবদুর গণির জন্ম ১৯১৫
সালের ১ ডিসেম্বর কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার নাগাইশ গ্রামের এক
সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। ১৯৪১ সালে মেজর গণি যোগ দেন ব্রিটিশ ভারতীয়
সেনাবাহিনীর পাইনিয়র কোরে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে। মেজর গণি একজন সাহসী
অফিসার ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তিনি অসম সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন।
১৯৪৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠার দিন কুর্মিটোলা
ক্যান্টনমেন্টে এক চা চক্রে তদানীন্তর জিওসি ব্রিগিডিয়ার আইয়ুব খান ইস্ট
বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদের উর্দু ভাষায় কথা বলার নির্দেশ দিলে মেজর গণি
তীব্র প্রতিবাদ করে বলেন, পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সৈন্যরা পাঞ্জাবী ভাষায় কথা
বলতে পারলে বাঙ্গালী সৈন্যরা বাংলা ভাষাতেই কথা বলবে। তিনি সেই দিন যে
দৃঢ়তা আর সাহসিকতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন তা সত্যিই ইতিহাসে বিরল। ১৯৪৮ সালের
১৫ ফেব্রুয়ারি বেঙ্গল রেজিমেন্টের মাধ্যমেই মেজর গণি মূলত ভাষা আন্দোলনের
সূচনা করে ছিলেন। সুতরাং মেজর গণি শুধু একজন সেনা অফিসার ছিলেন না বরং তিনি
ছিলেন বায়ান্নর মহান ভাষা আন্দোলনের একজন অগ্রনায়ক। সারাদেশ থেকে
তরুণদেরকে নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি এই রেজিমেন্ট গঠন করেন।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে এবং রেডিওতে কথিকার মাধ্যমে তিনি ইস্ট বেঙ্গল
রেজিমেন্টে যোগ দেয়ার জন্য তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতেন। ইস্ট বেঙ্গল
রেজিমেন্টের অফিসার ও জওয়ানরা ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে এবং একাত্তরে
স্বাধীনতার সংগ্রামে অবিস্মরণীয় বীরত্বের পরিচয় দেন।