মাসুদ আলম।।
মহামারি
করোনাভাইরাসে পর কুমিল্লায় নতুন দুশ্চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গু। গত
কয়েকদিন ধরে কুমিল্লায় করোনার সংক্রমণ কমলেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হাসপাতালে
ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। ঊর্ধ্বমুখী এই আক্রান্ত জনমনে বাড়াচ্ছে
উৎকণ্ঠা ও শঙ্কা।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে, সেপ্টেম্বর মাসের গত ৮
দিনে কুমিল্লায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৮জন। এতে জেলায় দৈনিক গড়ে
দুইজনেও বেশি মানুষ এই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এছাড়া গত ২৮ জুলাই
সর্বপ্রথম ভর্তি হওয়া ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগি কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ
হাসপাতালে ৩৪ জনের সংখ্যা ছাড়িয়েছে। সবশেষ গত ২৪ ঘন্টায় কুমিল্লা মেডিক্যাল
কলেজ হাসপাতাল ও জেলা সদর জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৮জন
ভর্তি রয়েছেন। ভর্তি হওয়া আক্রান্তদের মধ্যে কোন রোগকে মহামারী ঘোষণা বা
মৃত্যু হয়নি। অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
এদিকে আক্রান্ত রোগিদের
চিকিৎসা দিতে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে আলেদা
ডেঙ্গু কর্ণার খোলা হয়েছে। ওই কর্ণারে পৃথকভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগিদের
চিকিৎসা দেওয়া হবে।
কুমিল্লার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরো বছরজুড়ে মশক
নিধন কর্মসূচি বাস্তবায়িত না হওয়ায় এবং এডিস মশা সম্পর্কে সচেতন না হওয়ায় এ
সংক্রমণ প্রকোপ বাড়ছে। এজন্য কুমিল্লা দুই সিটি কর্পোরেশনকে দায়ী করছেন
তারা। শিশুদের জন্য করোনাভাইরাসের চেয়ে ডেঙ্গু বেশি বিপজ্জনক বলছেন তারা।
এডিস
মশা ধ্বংসে মশক নিধক স্প্রে কর্মসূচি সারাবছর অব্যাহত রেখেছে কুমিল্লা
সিটি কর্পোরেশনের (কুসিক) দাবি করে প্রধান নির্বাহী ড. সফিকুল ইসলাম বলেন,
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা সদর
জেনারেল হাসপাতলে যে রোগিরা ভর্তি হয়েছেন, তাদের অধিকাংশ জেলা শহরের
বাহিরের বাসিন্দা। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে কথা বলে এমনটি নিশ্চিত
হয়েছেন বলে দাবি করে তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ভর্তি রোগিরা ঢাকা
কিংবা আশপাশের জেলায় আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার
জন্য ভর্তি হচ্ছেন। তবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত নিয়ন্ত্রণে কুমিল্লার বিভিন্ন
এলাকা থেকে পানির নমুনা নিয়ে এতে এডিস মশার লার্ভা আছে কি না পরীক্ষা করা
হয়েছে। তারমধ্যে সিটি কর্পোরেশন এলাকার জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনালের একটি
জায়গায় এডিস মশার লার্ভা পায় স্বাস্থ্য বিভাগ। এ ছাড়া আর কোথাও লার্ভা
পাওয়া যায়নি। লার্ভা পাওয়ার পর মশক নিধক স্প্রে করা হয়েছে। এছাড়া কুসিকের
২৭ ওয়ার্ডে মশক নিধক ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে। আগামী দুই মাস প্রতিরোধক
প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল
অফিসার সৌমেন রায় জানান, কুমিল্লায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে
ভর্তি রোগির সংখ্যা বাড়ছে। এই পর্যন্ত জেলায় ৩৬ জনের ডেঙ্গু পজেটিভ শনাক্ত
হয়েছে। তাদের মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসের গত ৮ দিনেই ১৮ জনের শরীরে ডেঙ্গু
শনাক্ত হয়। বাকী ১৮ জন গত আগস্টের পুরো মাসজুড়ে। এতে করে বলা যায় কুমিল্লা
ডেঙ্গু প্রকোপ বাড়ছে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু সংক্রমনের উচ্চ ঝুঁকি এড়াতে
কুমিল্লার বিভিন্ন জায়গায় এডিস মশার লার্ডা পরীক্ষায় অভিযান চালিয়ে পানি
সংগ্রহ করা হয়। অভিযানে কুমিল্লার জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনাল এলাকায় এডিস
মশার লার্ডা পাওয়া যায়। পরে সেখানে মশক নিধক স্প্রে করার পর দ্বিতীয়বার
পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর আর কোন লার্ভা পাওয়া যায়নি।
জেলা
স্বাস্থ্যবিভাগ বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু সংক্রমিত এলাকা রাজধানী ঢাকার
খুব কাছাকাছি হওয়া যে কোন বাহনের মাধ্যমেই এডিস মশা কুমিল্লায় চলে আসতে
পারে। ঢাকার সাথে কুমিল্লার যোগাযোগ খুবই ভালো সেক্ষেত্রে যে কোন সহজ ভাবেই
এই মশা কুমিল্লায় হানা দিতে পারে। অন্যদিকে নোংরা পানিতে এডিসের বিস্তার
নিয়ে খুব একটা চিন্তা না থাকলেও, স্বচ্ছ-পরিষ্কার জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গুর
বিস্তার নিয়েই যত চিন্তা। আর কুমিল্লা শহরে যেহেতু নির্মানীধীন ভবনের
সংখ্যা অত্যধিক সে কারনে এসব জায়গায় বৃষ্টির পানি জমে এডিস মশার আশ্রয় হতে
পারে। এছাড়া ছাদ বাগানের টবে, এসি, ডাবের খোসা, চিপসের প্যাকেটের মত পানি
ধরে রাখার যে কোন জিনিসে তিন দিনের বেশি জমা পানিতেই এডিস মশার বিস্তার হতে
পারে। যে কারনে জনসচেতনতার কোন বিকল্প নাই। সাধারণ মানুষই পারে ডেঙ্গু
থেকে বাঁচতে এডিস মশার বিস্তার ঠেকাতে। তবে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের
কীটতত্ববিদ এবং সিটি কর্পোরেশনের সমন্বয়ে কুমিল্লার বিভিন্ন জায়গা থেকে
মশার লার্ভা সংগ্রহ করে পর্যালোচনার পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়।
কুমিল্লা
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন বলেন, বেড়ে যাওয়া ডেঙ্গুর প্রকোপ
নিয়ন্ত্রণে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করছে সিটি কর্পোরেশনকে সঙ্গে নিয়ে।
এখন পর্যন্ত জেলায় ৩৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগি শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের
মধ্যে বেশিরভাগ রোগি ঢাকা কিংবা আশপাশের জেলায় আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লার
বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অনেকে সুস্থ হয়েছেন। কোন রোগিকে এখন
পর্যন্ত মহামারী ঘোষণা করা হয়নি।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের
পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন বলেন, কুমিল্লা মেডিক্যালে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে
আক্রান্ত ৩৪জন রোগি ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে এখনও সাত পুরুষ এবং এক
নারীসহ ৮জন ভর্তি রয়েছেন। ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধিতে রোগির সংখ্যা বেড়ে
যাওয়ায় মেডিক্যালের ৭ম তলায় মেডিসিন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু কর্ণার খোলা হয়েছে। এই
কর্ণারে আলেদাভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগিদের ভর্তি করা হবে।