শাহীন আলম, দেবিদ্বার। । স্বপ্ন ছিল বিদেশ গিয়ে পরিবারের হাল ধরবে। তবে আর বিদেশ যাওয়া হলো না কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার আবদুল্লাহপুর (অনন্তপুর) গ্রামের সাইফুলের (২০)। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিয়ে বাড়িতে কি গান বাজবে তা নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে তার মৃত্যু হয়। সাইফুলের আরও চার ভাই-বোন রয়েছে। তারা হলেন, মোশারফ হোসেন, পপি আক্তার, পাপিয়া ও আবু সাঈদ।
এ ঘটনায় মুরাদনগর উপজেলার রাহীম মিয়া নামে আরও এক যুবকের মৃত্যু হয় এবং তিনজন আহত হয়। আহতদের ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
সাইফুলের বাবা মুদি দোকানী হাবিব মিয়া জানান, সৌদী আরবে যাওয়ার জন্য সাইফুল পাসপোর্ট করেছে। কয়েকদিনের মধ্যে ভিসা আসার কথা ছিলো। এতো দিন সে আমার দোকানে কাজ করত, সম্প্রতী সৌদী আরবে যাবে বলে দোকান ছেড়ে চলে আসে বাড়িতে।
নিহত সাইফুলের মা আউলিয়া বেগম জানান, রাতে খেয়ে বাসা থেকে বিয়ে বাড়ির দিকে যায়। অনেক রাতে ফিরে না আসায় আমি ফোন করি, পরে ৫মিনিটের মধ্যে বাড়িতে আসতেছি বলে আমাকে জানায় এটাই ছিলো আমার সাথে তার শেষ কথা। তিনি আরও জানান, আমার ভাইয়ের মেয়ে সাথী আক্তারের সাথে ছেলের বিয়ের কথাবার্তা চলছিলো। আমি তাকে বলেছিলাম, তুই বিদেশ থেকে তিনবছর পর টাকা পয়সা নিয়ে বাড়িতে আসলে তোর সাথেই সাথীকে বিয়ে দেব। ছেলে রাজী হয়েছিলো বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন আউলিয়া বেগম।
স্থানীয়রা জানান, সাইফুল রসুলপুর বাজারে নিজেদের মুদি দোকানেথাকত। কয়েক মাস আগে বিদেশ যাবে বলে দোকান ছেড়ে দেয়।
তারা আরও বলেন, যারা বিয়ে বাড়িতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়েছে তারা এলাকারও কেউ না। পাশ^বর্তী গুঞ্জর গ্রাম থেকে এখানে এসে সংঘর্ষে জড়ায়। বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সংঘর্ষের ঘটনায় পুরো এলাকায় থমথমে বিরাজ করছে। ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ রেখেছে। ঘটনাস্থল রক্তাক্ত।
নামপ্রকাশে অনেচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, বিয়ে বাড়িতে কি নিয়ে তর্কাতর্কি করেছে জানি না। পরে এ মার্কেটের সামনে এসে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় কয়েকজনের হাতে ছুরিও দেখা গেছে। ঘটনাস্থলে রাহিম নামে এক যুবকের রক্তাক্ত লাশ পড়েছিলো। সাইফুলকে আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.আরিফুর রহমান জানান, খবর পেয়ে গভীর রাতে যখন ঘটনাস্থলে যাই তখন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিয়ে বাড়িতে নাচ-গান করতে এসে স্থানীয় যুবকদের সাথে পাশ^বর্তী গ্রামের কিছু যুবকদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে সাইফুল ইসলাম ও রাহীম নামে দুই যুবকের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমেক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।