
তানভীর দিপু ||
নামের
সঙ্গে আছে ‘মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র’। বেড (বিছানা) থাকার কথা ১০টি;
কিন্তু চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ২১ জন রোগীর। একটি ঘরেই একটির সাথে আরেকটি
লাগিয়ে গাদাগাদি করে পাতা হয়েছে ১৮টি বেড। করোনা ভাইরাসের প্রকোপে যে
ন্যূনতম সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে বলা হয়েছে, এখানে তা রক্ষা করার যে কে নো
উপায় নেই, তা বেডগুলো দেখেলেই বোঝা যায়। তেলচিটচিটে বালিশ আর
অন্ধকারাচ্ছন্ন কক্ষ দেখলে কোনোভাবেই মনে হবে না যে এই কক্ষে রেখে কোনো
রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়। রোগীর খাবার হিসেবে দেয়া হয়েছে ভাতের সঙ্গে সবজি,
ডিম ভাজা আর ডাল। এমন দৃশ্য দেখা গেছে গতকাল রবিবার কুমিল্লার ‘পুনঃজীবন
আশ্রয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র’তে গিয়ে।
এই মাদক নিরাময় কেন্দ্রে
অভিযান শেষে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সদস্য কুমিল্লা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের
মেডিকেল অফিসার ডা. সৌমেন রায় কুমিল্লার কাগজকে বলেন, ‘দেখে খুব অবাক হলাম,
মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোর এমন অস্বাস্থ্যকর অপরিচ্ছন্ন অবস্থা! আর রোগীদের
যেখানে ভালো খাবারের দরকার, সেখানে খাবারের এত নি¤œমান! এমন গাদাগাদি
অবস্থা যে, কারো যদি করোনা হয়, তাহলে একেবারে ম্যাসাকার হয়ে যাবে।’
অব্যবস্থাপনা
আর অপরিচ্ছন্নতার অপরাধে গতকাল কুমিল্লা নগরীর শাকতলায় অবস্থিত ওই মাদক
নিরাময় কেন্দ্রটিকে জরিমানা করে জেলাপ্রশাসন ও স্বাস্থ্যবিভাগের যৌথ
ভ্রাম্যমাণ আদালত। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখার দায়েও করা হয় জরিমানা। ডা.
সৌমেন রায় জানান, এর আগে ‘জন্ম মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে’ গিয়েও প্রায়
একই চিত্র দেখা গেছে। এই প্রতিষ্ঠানটির মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের
অনুমোদন থাকলেও স্বাস্থ্যবিভাগের অনুমোদন নেই। সেখানেও সেবা দেয়া হচ্ছিল ১০
বেডের বিপরীতে ১৭ জনকে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের সদস্য ডা. সৌমেন আরো
জানান, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার দায়ে জন্ম মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রকে ১০
হাজার টাকা এবং পুনঃজীবন আশ্রয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে মেয়াদোত্তীর্ণ
ওষুধ রাখার দায়ে ৫ হাজার টাকা আর নি¤œমানের
খাবার-অপরিচ্ছন্নতা-অব্যবস্থাপনার দায়ে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
গতকালের অভিযানে ঔষধ প্রশাসন কুমিল্লার সহকারী পরিচালক শফিকুর ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।
ভ্রাম্যমাণ
আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জনি রায় বলেন, পুুনঃজীবন মাদক নিরাময়
কেন্দ্রটির অবস্থা অনুকূল ছিল না। তাই আমরা তাদের ২০ হাজার টাকা জরিমানা
করেছি।
জানতে চাইলে পুনঃজীবন আশ্রয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে
কাউন্সিলিং-এর দায়িত্বে থাকা জহির উদ্দিন মুঠোফোনে কুমিল্লার কাগজকে বলেন,
‘ফলোআপ রিকভারির জন্য আজ (রবিবার) বেশি মানুষ ছিল। আমরা সবাইকে রিলিজ করে
দিয়েছি। আর রুটিন খাবারে আজ ডিম সবজি ডাল ছিল।’
এদিকে গত রবিবারও এই
ভ্রাম্যমাণ আদালতটি অভিযান চালায় নগরীর ৩টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে। সদর
হাসপাতাল রোডে শাফী ডায়গনস্টিক, হাউজিং এস্টেট এলাকার আল নূর হাসপাতাল এবং
ডিসি রোডের সেবা হাসপতালকে মোট ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করে
ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ভ্রাম্যমান আদালত সূত্রে জানা গেছে, শাফী
আলট্রাসনোগ্রাফীতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সেবামূল্য তালিকা নেই। হাউজিং
এস্টেট এলাকার আল নূর হাসপাতালে ছিল না কর্তব্যরত ডাক্তার। অপরিচ্ছন্ন
পরিবেশে রোগী থাকার অনুপযোগী অবস্থা। প্যাথলজির কাজে ব্যবহৃত ফ্রিজটিও ছিল
রোগীর কক্ষে। এসব অনিয়মের দায়ে ভোক্তা অধিকার আইনে এই প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ
টাকা জরিমানা করা হয়। ডিউটি ডাক্তার না থাকা আর অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের জন্য
সেবা হাসপাতালকে জরিমানা করা হয় ৫০ হাজার টাকা।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসন
কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জনি রায় জানান, মাদক নিরাময়
কেন্দ্রগুলোর একটির অবস্থা মোটামুটি ভালো থাকলেও পুুনঃজীবন নামে
প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা অনুকূল ছিল না। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন অনিয়ম ও
অব্যবস্থাপনা রোধ করে বেসরকারি ক্লিনিক-ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলোতে শৃঙ্খলা
আনতে ও সেবার মান নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের
সমন্বয়ে এই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেছি।’