
জহির
শান্ত : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিংবা উপসর্গ থাকা রোগীদের চিকিৎসার জন্য
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে স্থাপিত কোভিড-১৯ ইউনিটে ৫৬
দিনে মারা গেছেন ২৭৭ জন। সে হিসেবে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫ জন রোগী মারা
যাচ্ছেন হাসপাতালটিতে।
গত ৩ জুন কুমেকে কোভিড-১৯ ইউনিট চালু করা হয়।
পরদিন থেকে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও মৃতদের তথ্য প্রকাশ করছে
কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিনই এই হাসপাতালে একাধিক রোগীর মৃত্যুর তথ্য পাওয়া
যাচ্ছে। একমাত্র ২৭ জুলাই কোনো প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেনি এখানে।
করোনা
প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকা সময়ে কুমেকে স্থাপিত কোভিড-১৯ ইউনিটে প্রাথমিকভাবে
করোনা ইউনিটে ১০টি আইসিইউ শয্যা ছিলো। পরে যোগ হয় আরো ৮টি। কিন্তু সব ধরনের
সুযোগ সুবিধা ও চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে
আসা রোগীদের মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রতিদিনই ঘটছে একাধিক প্রাণহানির
ঘটনা। দীর্ঘ হচ্ছে মৃতের তালিকা।
সর্বশেষ গতকালও করোনার সংক্রমণ-উপসর্গ
নিয়ে মারা গেছেন ২ জন। তার আগের দিন উপসর্গ নিয়ে মারা যান ৬। সব মিলিয়ে
হাসপাতালটিতে মৃত্যু ছাড়িয়েছে পৌনে তিন শ’। বর্তমানে এই হাসপাতালে ভর্তি
আছেন ১২৫ জন। এর মধ্যে ৮৩ জন পুরুষ ও ৪২ জন নারী। এর মধ্যে আইসোলেশন
ওয়ার্ডে ৪৭ জন, করোনা ওয়ার্ডে ৬০ জন এবং আইসিইউতে ১৮ জন। নারীদের মধ্যে ১১
জন আইসোলেশনে, ২৫ জন করোনা ওয়ার্ডে এবং আইসিইউতে ৬ জন ভর্তি আছেন।
কোভিড
হাসপাতালের তথ্য কেন্দ্র থেকে জানা গেছে, গতকাল ৩০ জুলাই পর্যন্ত গত ৫৬
দিনে এ হাসপাতালে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা
রোগীদের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ২৭৭ জন। এর মধ্যে ১ জুলাই ৫ জন, ২ জুলাই ৭
জন, ৩ জুলাই ৮ জন, ৪ জুলাই ৮ জন, ৫ জুলাই ৭ জন, ৬ জুলাই ৫ জন এবং ৭ ২ জন, ৮
জুলাই ৫জন, ৯ জুলাই ৯ জন, ১০ জুলাই ১ জন, ১১ জুলাই ৫জন, ১২ জুলাই ৫ জন, ১৩
জুলাই ৩জন, ১৪ জুলাই ৫ জন, ১৫ জুলাই ৪জন, ১৬ জুলাই ১জন, ১৭ জুলাই ৪জন এবং
১৮ জুলাই ৪ জন, ১৯ জুলাই ৪জন, ২০ জুলাই ৩জন, ২১ জুলাই ২জন, ২২ জুলাই ৩জন,
২৩ জুলাই ৬জন, ২৪ জুলাই ৫জন, ২৫ জুলাই ৬জন, ২৬ জুলাই ৫জন, ২৭ জুলাই ০ (কেউ
মারা যায়নি), ২৮ জুলাই ৩জন, ২৯ জুলাই ৬ জন এবং ৩০ জুলাই মারা যান ২জন।
জানতে
চাইলে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ও কুমিল্লার সাবেক
সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া,
ফেনী ও নোয়াখালী জেলার রোগীরা এখানে ভর্তি হন। এই পাঁচ জেলার অতি সংকটাপন্ন
রোগীই এখানে মারা গেছেন। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন,
হাসপাতালটিতে বেশিরভাগ রোগীই চিকিৎসার জন্য আসেন একেবারে শেষ মুহূর্তে-
মুমূর্ষূ অবস্থায়। ফলে চিকিৎসা সেবায় আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও তাদের অনেককে
বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া এখানে আসা রোগীদের একটা বড় অংশই বয়োবৃদ্ধ।
তাদের অনেকেরই অক্সিজেন সিচুরেশন লেভেল একেবারে নি¤œ পর্যায়ে চলে আসে। যার
কারণে এখানে মৃত্যুর হারটা একটু বেশি। তবে আমাদের চিকিৎসক টিম খুবই
আন্তরিক। তাঁরা তাঁদের সাধ্য অনুযায়ী রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
হাসপাতালের
সহকারী সার্জন ও তথ্য কর্মকর্তা মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বর্তমানে এ
হাসপাতালে রোগী ভর্তি ১১১ জন। আইসিইউতে ভর্তি আছেন ১০ জন পুরুষ ও সাতজন
মহিলাসহ মোট ১৭ জন। এই হাসপাতালে কোভিড রোগী ভর্তি আছেন ৪৫ জন। এর মধ্যে ৩২
জন পুরুষ ও ১৩ জন নারী।