
শাহীন আলম, দেবিদ্বার।
দেবিদ্বারে নানা কারণে দিন দিন বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। ইতোমধ্যেই উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ। শুধু ইউনিয়ন পর্যায়ে নয় উপজেলা সদরেও সংক্রমিত হয়েছে চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণীর পেশার মানুষ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১০৯জন এরমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন নয়জন। সম্ভবত বাংলাদেশে এ একটি উপজেলাই প্রথম যেখানে এতো লোকের প্রাণহানি ঘটেছে। স্থানীয় প্রশাসন শুরু থেকেই প্রচার প্রচারণা ও পরে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে চেষ্টা করেও লোকজনকে ঘরে রাখতে পারছেন না। যার কারণে একজন থেকে অন্যজন সহজে সংক্রমিত হচ্ছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। উপজেলা প্রশাসন থেকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বারবার বলা হলেও সদরের এসএস সরকারি কলেজ রোডে বাড়ছে মানুষের চলাচল। বাহিরে সাঁটারে তালা লাগিয়ে ভিতরেও গাদাগাদি করে কেনাকাটা করতে দেখা যাচ্ছে নারী পুরুষসহ অনেককেই। যা করোনা বিস্তারের ঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়িয়ে তুলছে।

বুধবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলা সদরে মানুষের অবাধে চলাফেরা করছে। স্বেচ্ছাসেবীরা হ্যান্ডমাইকে বারবার ঘরে থাকার অনুরোধ জানালেও কে শোনে কার কথা। লকডাউন ও জনসমাগমের ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন ও পৌর মার্কেট কমিউনিটি পুলিশিং এর কড়াকড়ি নির্দেশ থাকলেও সদরের কিছু ব্যবসায়ী বাহিরে সাঁটারে তালা লাগিয়ে ভিতরে কাপড়, জুতা, কসমেটিক বিক্রি করছেন হরদমে। বাহির থেকে দেখে মনে হবে ভিতরে কেউ নেই। অথচ ভিতরে বিশেষ ব্যবস্থায় গাদাগাদি করে কেনাবেচা চলছে। এতে সংক্রমিত হওয়ার বড় একটি ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
সদরের বিভিন্ন স্পটে ঘুরে আরও দেখা যায়, জুতা কেনার জন্য শিশুদের নিয়ে মার্কেটে এসেছেন গুনাইঘরের রাহেলা, হোসনেয়ারা, বানিয়াপাড়ার এলাকার লতাসহ আরও কয়েকজন নারী। তাদের কারও মুখেই মাস্ক নেই, এমনকি শিশুদের মুখেও নেই। তারা বিশেষ ব্যবস্থায় জুতা দোকানের ভিতরে গিয়ে বাহির থেকে সাঁটারে তালা লাগিয়ে ভেতরে কেনাকাটা করছেন। পরে স্বেচ্ছাসেবী ও স্থানীয় পৌর মার্কেট কমিউনিটি পুলিশিং নেতৃবৃন্দ জানতে পেরে ওই দোকানে অভিযান চালিয়ে সাঁটারের তালা খুলে গাদাগাদি অবস্থায় তাদেরকে বের করেন।
এছাড়াও বাহিরে ঘুরাফেরা করা এমন অনেককেই জিজ্ঞাসা করে জানা যায়, তারা এসেছেন বাহিরে কি পরিস্থিতি তা দেখার জন্য। কোন কারণ ছাড়াই অযথা কেন ঘুরাফেরা করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই চুপ থাকছেন, মাথা নিচু করে চলে যাচ্ছেন সামনের দিকে। এমন উৎকট পরিস্থিতিতে করোনা সচেতনতার বালাই বলতে নেই মানুষের মাঝে। অন্যদিকে, মার্কেট ও বিপনী বিতানের সামনের ব্যবসায়ীরা বসে আছেন অনেকটা চিন্তিত হয়ে। একাধিক ব্যবসায়ী জানান, দোকান বন্ধ থাকায় অনেক টাকার লোকসানে পড়তে হবে। দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীর বেতন, সংসার চালাতে হিমসীম পড়তে হচ্ছে।

বিশিষ্টজনরা মনে করছেন, দেবিদ্বারে করোনার ‘হটস্পট’ হয়ে ওঠা নেপথ্যে রয়েছে মানুষের অসচেতনতা, সৃষ্ট লকডাউনের শিথিলতা। সচেতনতার অভাবে লকডাউন ভেঙে মানুষ অবাধে চলাচল করছে। সামনে ঈদকে কেন্দ্র করে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন জেলা থেকে উপজেলা সদরে আসছেন করোনা ছড়িয়ে পড়ার এটিও একটি বড় কারণ বলে মনে করছেন তারা।
এদিকে, পৌর মার্কেট কমিউনিটি পুলিশিং যুবলীগ নেতা মো. কাজী সুমন’র উদ্যোগে বুধবার দুপুরে দোকান পাট বন্ধ রাখা ও জনসচেতনতার বৃদ্ধির জন্য গতকাল সদরের বিভিন্ন স্পটে অভিযান চালান। এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পৌর মার্কেট কমিউনিটি পুলিশিং এর সহ সভাপতি মো. লুৎফুর রহমান বাবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক, রফিকুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক রমর দাস প্রমুখ।
দেবিদ্বার পৌর মার্কেট কমিউনিটি পুলিশিং এর সাধারণ সম্পাদক খন্দকার নুরুজ্জামান বিপ্লব জানান, পৌর সদরের সকল দোকানপাট বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে। এরপরও কিছু দোকান পাট আড়ালে দোকান খোলা রাখছে। এতে সংক্রমিত হওয়ার আশংকা বাড়ছে।
দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিব হাসান জানান, মহামারী করোনা বিস্তার ঠেকাতে প্রশাসন ওষুধের দোকান ও কাঁচা বাজারে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেকে সচেতনতার অভাবে এ নির্দেশনা মানছেন না। ফলে দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। জনসমাগম নিষিদ্ধ করতে প্রশাসন কঠোরতা অবলম্বন করছে। মানুষকে এ মুহুর্তে ঘরে রাখা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।