
বিশেষ সংবাদদাতা ||
টোকিও
অলিম্পিক গেমস-২০২০ সামনে রেখে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি)
স্কলারশিপ নিয়ে সাঁতারু আরিফুল ইসলাম নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন ফ্রান্সে।
দেশটির রাজধানী প্যারিস থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে রুয়া নামে একটি শহরের
ভাইকিংস ক্লাবের সুইমিং কমপ্লেক্সে অনুশীলন করছিলেন আরিফুল ইসলাম। কিন্তু
করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৩ মার্চের পর থেকে রয়েছেন পুরোপুরি গৃহবন্দী
অবস্থায়।
অনুশীলনে বেশিরভাগই ছিলেন ফরাসি, কোচিং স্টাফও স্থানীয়।
অনুশীলন বন্ধ হওয়ার পর স্থানীয় সাঁতারু আর কোচরা যার যার ঘরে ফিরে গেছেন।
শুধু ১০ জনের মতো ছিলেন অন্যান্য দেশের। করোনা শুরুর পর টোগো, গ্যাবন,
চাঁদ, সিরিয়ার ৫ জন দেশে ফিরে গেছেন। ফলে আফ্রিকার চারজনসহ আরিফুল ইসলাম
বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন সেখানে।
অলিম্পিক গেমস হচ্ছে না নির্ধারিত
সময়ে। আগামী জুলাইয়ের পরিবর্তে এখন এক বছর পিছিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই
গেমস আয়োজনের কথা ভাবছে আইওসি। তাও হবে কি না ঠিক নেই। এই অবস্থায়
আরিফুলদের এই স্কলারশিপের সময়কালও বেড়ে যেতে পারে।
বৃহস্পতিবার
সন্ধ্যায় ফ্রান্স থেকে আরিফুল ইসলাম বলছিলেন, ‘আমাদের সিআরকেএস সেন্টার
থেকে আভাস দেয়া হয়েছে অলিম্পিক পিছিয়ে যাওয়ায় স্কলারশিপও এক বছর বাড়ানো হতে
পারে। তাহলে আমার জন্য ভালোই হবে। ট্রেনিংটা আরও ভালো করে নিতে পারব।’
২০১৮
সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে দুই বছরের স্কলারিশপ শুরু হয়েছিল আরিফুলের। এখন
সেটি গেমস শুরুর আগ পর্যন্ত এখন বর্ধিত হওয়ার সম্ভাবনা। গত ২০ মাসে ৩ বার
দেশে এসেছিলেন। সর্বশেষ আসেন গত বছর ডিসেম্বরে নেপালে অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে
অংশ নিতে। তার আগে একবার এসেছিলেন জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে, আরেকবার
ছুটিতে। এসএ গেমস শেষে ২ ফেব্রুয়ারি ফ্রান্স গিয়ে মাসখানেক অনুশীলন করার
পরই সবকিছু এলোমেলো করে দেয় মহামারী করোনাভাইরাস।
খাওয়া-দাওয়া আর
ঘরের মধ্যে শরীরচর্চা। এর বাইরে আর কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক
ফ্লাইট চলাচল বন্ধ বলে দেশের ফিরতে পারছেন না। কিশোরগঞ্জের নিকলিতে
আরিফুলের বাবা মো. ইউনুছ আলী ও মায়ের সঙ্গে আছে ছোট এক ভাই। অন্য তিন
ভাইয়ের একজন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে, আরেকজন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে চাকরি
করেন। একজন পড়াশোনা করেন মাদ্রাাসায়।
ফ্লাইট বন্ধ সেটা জানেন আরিফুলের বাবা-মা। তারপরও ফোনে কথা হলে তাদের একটাই আবদার, ‘বাবা তুই দেশে ফিরে আয়।’
আরিফুল
বলেন, ‘ফ্রান্সে গৃহবন্দী থেকে সারক্ষাণই দেশের কথা মনে করি। বাবা-মা আর
ভাই-বোনের কথা মনে করি। মন চলে গেছে দেশে, কিন্তু আমি পড়ে আছি ফ্রান্সে। এই
তো দুই দিন আগে আমি স্বপ্নে দেখলাম বাবা আমাকে বলছেন, ‘তুই দেশে ফিরে আয়।’
আমি ঘুম থেকে উঠেই বাবাকে ফোন করলাম। স্বপ্নের কথা অবশ্য বলিনি তাকে।’
গৃহবন্দী
থাকলেও ভালো আছেন উল্লেখ করে আরিফুল বলেন, ‘আমি ভালো আছি, কোন সমস্যা নেই।
এখানে খুব কড়াকড়ি। একদম বের হতে দেয় না কাউকে। তবে কবে নাগাদ আবার পুলে
নামতে পারব বুঝতে পারছি না। শুনছি ১১ মের পর এখানে সীমিত আকারে লকডাউন খুলে
দেবে। ২-১ দিনের মধ্যে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন।
তখনই বোঝা যাবে কী হয়। সরকার চাচ্ছে কিছুকিছু লকডাউন খুলে দিতে। আবার
বিরোধীদল বলছে খোলা যাবে না। এখন সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয় দেখা যাক।’
গত
এসএ গেমস দুটি রৌপ্য ও একটি ব্রোঞ্জ জেতা আরিফুলের লক্ষ্য অলিম্পিক গেমসে
কোয়ালিফাই করা, ‘আমি পরিশ্রম করে যাচ্ছি। যাতে অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করতে
পারি। সেটা হলে আমার ক্যারিয়ারে প্রথম অলিম্পিক গেমসে অংশ নেয়া হবে। আমি
দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।’