
তানভীর দিপু:
কুমিল্লা নগরীতে
বেড়েছে মশার উপদ্রব। শীত কমে যাওয়ার সাথে সাথে এই উৎপাত বাড়ছে আরো। গত বছর
ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ ঠেকানোর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মশা নিধনে মৌসুমের আগেই
মাঠে নেমেছে প্রশাসন। জেলা সিভিল সার্জন বলছেন, ডেঙ্গু ঠেকাতে সবার আগে
সাধারণ মানুষকে নিজে সচেতন হয়ে বাড়ি-ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
কুমিল্লা
নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। সব জায়গাতেই দিনে
রাতে এই উৎপাত সমান। তবে এই মশা কি প্রজাতির তা জানে না কেউ। হঠাৎ করে মশার
এমন উপদ্রবে এডিস মশা থেকে ছড়ানো ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে আতংকিত অনেকে। গত কয়েক
বছরে ডেঙ্গু জ্বরের যে প্রাদুর্ভাব ছিলো- তা এবছর ভাবিয়ে তুলছে সাধারণ
মানুষকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই জানিয়েছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া
কলেজ ক্যাম্পাস,অশোকতলা, বজ্রপুর, শাসনগাছা, চর্থা, টমছমব্রীজ, বাঁগিচাগাও,
রেইসকোর্স, ছেটরা, চকবাজার, মৌলভী পাড়া, শুভপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় মশার
উৎপাত মাত্রা ছাড়িয়েছে।
রাজগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী আনোয়া হোসাইন জানান,
রাজগঞ্জ এলাকায় দিনে-রাতে মশার অত্যাচার। দিনের বেলাতেও মশার কয়েল জ্বালিয়ে
রাখি। সিটি কর্পোরেশন থেকে সব জায়গাতেই ব্যাপক হারে মশক নিধন কার্যক্রম
এখনি শুরু করা দরকার।
হারুন স্কুল এলাকার অধিবাসী দ্বীন মোহাম্মদ
জানান, মশার যে উপদ্রব বেড়েছে তা কি ধরনের মশা তা আমরা সাধারণ মানুষ কিভাবে
বুঝবো? এখন যে মশা কামড়াচ্ছে তা কি এডিস মশা কি না জানি না। আমার বাসায়
শিশু সন্তান আছে, তাকে মশা থেকে বাঁচাতে যতক্ষন সম্ভব মশারি টানিয়ে রাখি।
২০১৯
সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কুমিল্লার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় ১
হাজার ৫৪ জন। এর মধ্যে প্রায় ৮ শ’ জন চিকিৎসা নিয়েছেন কুমিল্লা মেডিকেল
কলেজ হাসপাতালে। গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা না গেলেও আগেষ্টের
দিকে এই রোগে আক্রান্তের হার বাড়তে থাকে আশংকাজনক হারে। জনমনে এই রোগ নিয়ে
আতংক ছড়িয়ে পরে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের তৎপরতায় দ্রুতই কমে আসে
এই রোগের প্রকোপ।
এবছর ডেঙ্গুর প্রকোপ রোধে আগে থেকেই সতর্ক প্রশাসন ও
স্বাস্থ্য বিভাগ। ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখে জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জনের যৌথ
সভায় নেয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোঃ
নিয়াতুজ্জামান জানান, এডিস মশার লার্ভা বা ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবার আগে
সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। যার যার অবস্থানের আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন
রাখতে হবে। ইতিমধ্যে আমরা বিভিন্ন স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় সচেতনতামূলক
প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে এই
প্রোগ্রামগুলো করা হবে। আর গত বছরের পর্যালোচনায় এবার যদি ডেঙ্গুর প্রকোপ
দেখা দেয় সেজন্য আমরা আগে থেকেই প্রস্তুত। ডেঙ্গুর জন্য আলাদা একটি ওয়ার্ড
খোলা হবে, জরুরি পর্যবেক্ষক দল থাকবে এবং সেবা প্রদানকারী-সচেতনতা বৃদ্ধির
জন্যও আলাদা টিম থাকবে।
প্রচলিত ঔষধের বাইরে গিয়ে ডেঙ্গুবাহী মশার কীট
পর্যালোচনা করে নতুন ঔষধ ছিটানোর জন্যও পরামর্শ দিয়েছেন সিভিল সার্জন। তিনি
জানান, পুরোনো বছরের ঔষধ এবছর কাজ না-ও করতে পারে। তাই স্বাস্থ্য বিভাগের
সাথে পরামর্শ করে সিটি কর্পোরেশনকে নতুন ঔষধ সরবরাহ করতে হবে।
কুমিল্লা
সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর শওকত হোসেন জানিয়েছেন,
ইতিমধ্যে কুমিল্লা সিটির ১৮টি ওয়ার্ডে ড্রেন নালা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা
কার্যক্রম চলছে। সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রম
চালাচ্ছে। এবছর যেন ডেঙ্গুর প্রকোপ না দেখা দেয় সেজন্য এডিস মশার লার্ভা
বিনষ্টকারী ঔষধ ছিটানো হচ্ছে।