Published : Monday, 24 February, 2020 at 12:00 AM, Update: 24.02.2020 1:37:41 AM

তানভীর দিপু ||
কুমিল্লা
শহরতলীর চাঁনপুর এলাকায় বাসা থেকে ডেকে নিয়ে শরীফুল ইসলাম জনি নামে এক
যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। রোববার ভোরে জেলার আদর্শ সদর উপজেলার
চাঁনপুর পশ্চিমপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত শরীফুল ইসলাম জনি (২৭) ওই
এলাকার মৃত বাচ্চু মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ নগরীর পুরাতন
চৌধুরীপাড়া এলাকা থেকে রাজিব, ইয়াছিন ও হাসান নামে ৩ জনকে আটক করেছে। ঘটনার
পর হত্যায় অভিযুক্ত পুরাতন চৌধুরী পাড়া এলাকার হৃদয় ও রাজিবের বাড়িতে
দুুপুরে ভাংচুর চালায় নিহত জনির পক্ষের লোকজন ও উত্তেজিত জনতা। পরে
সন্ধ্যায় ওই বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ধারনা করা
হচ্ছে মাদক সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এই হত্যাকা-।
জনির পরিবার সূত্রে
জানা গেছে, রোববার ভোরে জনিকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় সাগর, রাজিব, রফিক,
হৃদয় নামে আরো কয়েকজন যুবক। পরে বাড়ির সামনেই তারা তাকে মারধর করে এবং এক
পর্যায়ে ঘাতকরা ছুরি দিয়ে বুকে আঘাত করে। জনির চিৎকারে আশেপাশের লোকজন জড়ো
হতে থাকলে ঘাতকরা পালিয়ে যায়। এসময় স্থানীয়রা ৯৯৯-এ ফোন করে সহযোগিতা চাইলে
কোতয়ালী থানা পুলিশের একটি দল জনিকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে জনির বুকে বিঁধে থাকা ছুড়ি
বের করতে ব্যর্থ হয় কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। প্রাথমিকভাবে তাকে চিকিৎসা দিয়ে
ঢাকায় পাঠানো হলে পথেই জনি মারা যায়। নিহত জনির মা জোসনা বেগম জানান,
রোববার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তার ছেলে শরীফুল ইসলাম জনিকে বাড়ি থেকে ডেকে নেয়
জনির বন্ধু পার্শ্ববর্তী পুরাতন চৌধুরীপাড়া এলাকার রফিকের ছেলে সাগর,
হাসান মিয়ার ছেলে রাজিব ও হৃদয়। আমি পেছন পেছন গিয়ে দেখি তারা তর্কাতর্কি
করছে। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে জনিকে ছুরিকাঘাত করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা
জানায়, জনি, হৃদয়, সাগরসহ আরো কয়েকজন একসাথেই এলাকায় চলাফেরা করতো। ঘটনার
দিন ভোরে সাগরসহ কয়েকজন জনিকে নিয়ে চাঁনপুর এলাকায় রাস্তায় আসে। পরে তাকে
এলোপাথারি মারধর করতে থাকে। তাদের মধ্যেই একজন জনির বুকে ছুরি ঢুকিয়ে দেয়।
ভোর বেলা হওয়ায় আশেপাশে লোকজন কম ছিলো। গুরুতর আহত জনির চিৎকার করতে থাকলে
আশেপাশের বাড়ি থেকে লোকজন এগিয়ে আসলে ঘাতকরা পালিয়ে যায়। এসময় ৯৯৯-থেকে
ফোনে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে। মাদক বিক্রির টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে এই
ঘটনার সূত্রপাত। জনির মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে জনির পক্ষের লোকজন দুপুরে পুরাতন
চৌধুরী পাড়া এলাকায় অভিযুক্ত হৃদয়, রাজিব ও হাসানের বাড়িতে ভাংচুর চালায়।
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ হৃদয়ের বাবা হাসান মিয়া ও রাজিবকে আটক করে। পরে ইয়াছিন
নামে আরো একজনকে আটক করে পুলিশ। পুলিশ জানায় ভাংচুরের পর ঘটনার পর পুরাতন
চৌধুরী পাড়া ও চাঁনপুর এলাকায় টহল জোরদার করা হয়। টহল পুলিশের এএসআই মোঃ
রাজিব জানান, ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা হাসান মিয়ার বাড়ি ভাংচুর করে। পুলিশ
এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এসময় ঘটনায় জড়িত সন্দেহভাজন রাজিব পুরাতন
গোমতী সাঁতরে পালিয়ে যাবার সময় স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে আটক করা হয়। হৃদয়
ও রাজিবের পিতা হাসান মিয়াকেও পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। রোববার সন্ধ্যায়
টহলের ফাঁকে আবারো হাসান মিয়ার বাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
আগুনে হাসান মিয়ার বাড়ির ৮টি ঘর পুড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এসে
আগুন নিয়ন্ত্রন করে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ারুল হক জানান, হত্যাকান্ডের পর থেকেই এই এলাকায় পুলিশ
মোতায়েন ছিলো। জনি এবং তার প্রতিপক্ষের বাড়ির দূরত্ব কাছাকাছি। তাই পুলিশের
একটি দল দুই এলাকাতেই টহল দিচ্ছিলো। ফাঁক পেয়ে দুর্বৃত্তরা আগুন লাগিয়ে
দেয়। এসময় বাড়িতে কেউ ছিল না বলেও জানায় পুলিশ। কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার
সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে মাদক সংক্রান্ত
বিরোধের জেরে এই হত্যাকান্ড। পূর্বশত্রুতার জের ধরেই ঘাতকরা জনিকে হত্যা
করেছে। ময়নাতদন্তের জন্য জনির মরদেহ কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালের মর্গে
রাখা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে এবং এই ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া
চলছে।