
তানভীর দিপু ||
চিকিৎসা
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়া বিধিমালা মানছে না কুমিল্লা সিটি
কর্পোরেশন নিয়োগকৃত সংস্থা ‘ইনোভেশন’। নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন সরকারি এবং
বেসরকারি হাসপতাল থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে সেগুলো শ্রেণি অনুযায়ী ডাম্পিংয়ের
কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। ফলে দুষিত হচ্ছে পরিবেশ, বাড়ছে স্বাস্থ্য
ঝুঁকি। ইনোভেশনের এমন দায়হীনতার বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে জেলা
উন্নয়ন সমন্বয়ন কমিটির সভায়।
গতকাল কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের
সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় এ নিয়ে অভিযোগ তুলেন
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শওকত আরা কলি। তিনি বলেন, কুমিল্লা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ নগরীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপতাল থেকে
বর্জ্য সংগ্রহ করে সেগুলোর শ্রেণী বিন্যাস অনুযায়ী ডাম্পিং করার জন্য
বেসরকারি সংস্থা ইনোভেশন কে নিয়োগ করে সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু সংস্থাটি
হাসপাতাল থেকে এসব বর্জ্য প্রতিদিন সংগ্রহ করে স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে বিনষ্ট
করছে না।
সভায় কুমিল্লা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে কর্মরত কুমিল্লা সদর
হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার ডা. সৌমেন রায় বলেন, সিটি কর্পোরেশনের
পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা হাসপাতাল কিনিক থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে তা জগন্নাথ
পুর ময়লার ভাগাড়ে খোলা জায়গায় নিয়ে ফেলছে। যার কারণে এসব জৈব ও রাসায়নিক
বর্জ্য থেকে জীবানু ছড়ায় আসে পাশের এলাকাগুলোতে। এসব বর্জ্য থেকে স্যালাইন
ব্যাগ, সিরিঞ্জসহ নানান পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সংগ্রহ করে টোকাইরা। এসব
সংগ্রহ করতে গিয়ে অজান্তেই এইচআইভি বা হেপাটাইটিস বি এর মত ভয়ানক রোগে
সংক্রমিত হচ্ছে তারা। এছাড়া রোগীর রক্ত মাংস মিশ্রিত জৈব বর্জ্য থেকে
ছড়াচ্ছে যক্ষাসহ শ্বাসতন্ত্রের নানান রোগ। তিনি জানান, আমরা হাসপাতালে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কালার কোড অনুযায়ী আলাদা আলাদা বাক্সে চিকিৎসা
বর্জ্য সংরক্ষণ করি। কিন্তু পরে তা যেভাবে বিন্ষ্ট করা হয় আসলেই তা
স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বেসরকারি কিনিক গুলো থেকেও যে বর্জ্য সংগ্রহ করা
হয় তা কিভাবে বিনষ্ট করা হয়-সে ব্যাপারে প্রশাসনের কঠোর নজর দেয়া দরকার।
উন্নয়ন
সমন্বয় সভায় উঠা অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করেছেন ইনোভেশন এর ফিল্ড অফিসার
বিকাশ গাইন। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে দৈনিক কুমিল্লার কাগজকে তিনি জানান,
পরিবেশ অধিদপ্তর কি চাচ্ছে তা পরিষ্কার ভাবে জানালে আমরা সেই ভাবে সিটি
কর্পোরেশনের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিতাম। চিকিৎসা বর্জ্য ডাম্পিং এর জন্য
জগন্নাথপুর ভাগাড়ে এক সময় বড় বড় ফিড(নির্ধারিত স্থান) করা ছিলো, এখন যা
ভরাট হয়ে গেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর যা চাচ্ছে তা শুধু মাত্র রাজধানীর একটি
কোম্পানি করছে। আমাদের ওই ধরনের প্লান্ট নাই। আমরা শুধু মাত্র জেনারেল
ওয়েস্টেজ (সাধারণ বর্জ্য) আর মেডিকেল ওয়েস্টেজ (চিকিৎসা বর্জ্য) আলাদা করতে
পারছি। এখন ফিড গুলো ভর্তি থাকার কারনে সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। সিটি
কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা হয়েছে, আবার ফিড তৈরী
করে সেগুলো আলাদা ভাবে ফেলা যাবে। সে জন্য কিছুটা সময় লাগবে।
জেলা
সিভিল সার্জন ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, কেউ যদি সরকারি বিধি না মেনে
হাসপাতাল বা কিনিক চালান সে ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর যদি কোন অভিযোগ দায়ের
করেন কিংবা অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না দেন তবে আমরা সে সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে
দিবো। আমরা খেয়াল রাখছি হাসপাতাল বা কিনিকের ভেতরে কালার কোড মেনে এসব
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঠিক মত হচ্ছে কি না। হাসপাতাল বা কিনিক থেকে এসব বর্জ্য
সংগ্রহ করে তা সঠিক ভাবে ডাম্পিং হচ্ছে কি না তা খেয়াল রাখবে সিটি
কর্পোরেশন এবং পরিবেশ অধিদপ্তর। যদি তারা এসব বর্জ্য সঠিক ভাবে ডাম্পিং না
হয় তাহলে তা অবশ্যই স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ।
বেসরকারি হাসপাতাল কিনিকের বর্জ্য নিজ দায়িত্বে অপসারণের নিদের্শ:
কুমিল্লার
সকল বেসরকারি হাসপাতাল এবং কিনিকের বর্জ্য আগামী দুই মাসের মধ্যে নিজ
দায়িত্বে সরকারি বিধি মোতাবেক অপসারনের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা
প্রশাসক মোঃ আবুল ফজল মীর।
গতকাল জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্য রাখাকালে এ নির্দেশনা প্রদান করেন তিনি।
তিনি
শংকা প্রকাশ করে বলেন, যদি শহরের হাসপাতালগুলোর এই দশা হয় তবে ইউনিয়ন বা
উপজেলা গুলোর চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আশংকাজনক। তাই জেলা স্বাস্থ্য
বিভাগ, পরিবেশ অধিপ্তর প্রশাসনের সহযোগিতায় এসব ব্যবস্থা দুই মাসের মধ্যেই
সুনিশ্চিত করতে হবে।