
চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি ||
কুমিল্লার
চৌদ্দগ্রামের নানকরায় অবস্থিত জিল ওয়্যারস্ লিমিটেড নামে বিদেশে
রপ্তানীযোগ্য জুতা ফ্যাক্টরীর শ্রমিকরা বেতন-ভাতার দাবিতে তৃতীয়বারের মতো
গতকাল শনিবার বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেছে। খবর পেয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা
প্রশাসন, থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মালিক পক্ষের সাথে
যোগাযোগ করে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় নিয়ে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকদেরকে
আশ্বস্ত করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাসুদ রানা, পুলিশের এএসপি (সার্কেল) সাইফুল ইসলাম
সাইফ, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মাহফুজ, মিয়াবাজার হাইওয়ে
পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ একেএম শরফুদ্দিনসহ প্রশাসন ও পুলিশের উর্ধ্বতন
কর্মকর্তাবৃন্দ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের
চৌদ্দগ্রামের বাতিসা ইউনিয়নের নানকরা এলাকায় অবস্থিত ‘জিল ওয়্যারস্
লিমিটেড’ নামক জুতা ফ্যাক্টরীর শ্রমিকরা বেতন-ভাতার দাবিতে শনিবার সকালে ওই
ফ্যাক্টরীর সামনে মহাসড়ক অবরোধ করে।
ফ্যাক্টরীটির শ্রমিক শেফালী
আক্তার, কল্পনা, পারভেজ, মোহাম্মদ আলী হোসেন ও মহিনসহ অনেক শ্রমিক অভিযোগ
করে বলেন, গত তিন মাস ধরে মালিক কর্তৃপক্ষ আমাদের বেতন পরিশোধ না করে গত ২১
অক্টোবর ফ্যাক্টরীটি বন্ধ করে দেয়। বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের
আন্দোলনের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন এর আশ্বাসে আমরা আন্দেলন স্থগিত করি।
ফ্যাক্টরীর প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে জানায়, ৩০ নভেম্বর শ্রমিকদের
বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে। আমরা বেতনের আশায় সকাল বেলায় ফ্যাক্টরীতে এসে
জানতে পারি, আমাদেরকে আজও বেতন ভাতা পরিশোধ করা হবে না। এ সময় শ্রমিকরা
বিক্ষুদ্ধ হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।
পরে খবর পেয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মাহফুজের
নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে
যান চলাচল স্বাভাবিক করে এবং তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। এরআগে গত ৩১
অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকালে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা বিক্ষোভ-সড়ক অবরোধ ও ৪
নভেম্বর সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে স্মারকলিপি দেয়।
বিক্ষুদ্ধ
শ্রমিকরা অভিযোগ করে আরো জানান, মালিক কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের জন্য জেনারেল
ফান্ডের নাম করে আমাদের থেকে প্রতি মাসে ৪’শ থেকে সর্বোচ্চ ৬’শ টাকা করে
কেটে রেখে দেয়। পরবর্তীতে সু-কৌশলে, বিভিন্ন অজুহাতে মালিক কর্তৃপক্ষ
শ্রমিকদেরকে ছাটাই করে দেয়। কিন্তু কেটে রেখে দেওয়া জেনারেল ফান্ডে জমাকৃত
কোন টাকাই পরে মালিক কর্তৃপক্ষ ফেরৎ দেয় না।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে,
জিল ওয়্যারস্ নামের বিদেশে রপ্তানীযোগ্য জুতা ফ্যাক্টরীর মালিক জহির উদ্দিন
তারেক বেসিক ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণের ঋণ গ্রহণ করে। বর্তমানে ব্যাংকের
ঋণ পরিশোধ থেকে বাঁচতে তিনি প্রায় সময় নিজস্ব লোক দিয়ে শ্রমিক আন্দোলন উসকে
দিয়ে মিডিয়ার নজরে এনে খবর কাভারেজ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেন।
এ বিষয়ে
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, ‘বকেয়া বেতনের
দাবিতে অবরোধরত শ্রমিক ও মালিক কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনা করে আগামী
বৃহস্পতিবারের মধ্যে বকেয়া বেতন পরিশোধ করার জন্য মালিক পক্ষকে নির্দেশ
দেওয়া হয়েছে’।ে
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল
মাহফুজ বলেন, ‘আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মালিক পক্ষকে শ্রমিকদের বকেয়া
বেতন পরিশোধের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেতন পরিশোধ
করা না হলে পরবর্তীতে মালিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া
হবে’।