
তানভীর দিপু ||
চকবাজার
থেকে শুরু করে কান্দিপাড়, কুমিল্লা নগরীর এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কে চলার সময়
যদি ডানে বামে একটু উপরে তাকিয়ে থাকেন- দেখবেন শহরটা যেন তারে পেচানো।
তারগুলো সব ইলেকট্রিসিটির নয়। ইন্টারনেটের তার, ডিশ লাইনের তার
অপরিকল্পিতভাবে টানার ফলাফল এই দৃশ্য। শুধু যদি শহরের রাস্তাগুলোর একপাশের
পোস্টগুলোতে এই তারগুলো জড়িয়ে টানা হত, তাহলে ও হয় তো আশংকা মুক্ত থাকতো
নগরীর মানুষ। এসব তারে জড়িয়ে ঢাকা পড়েছে কান্দিরপাড়, রাজগঞ্জ, চকবাজারের মত
গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ট্রান্সফর্মারগুলোও। আশংকার বিষয় হলো- বৈদ্যুতিক এই
ট্রান্সফর্মার গুলোতে ছোট খাট শর্ট সার্কিট ও ঘটিয়ে দিতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
আর এই শহরে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে আগুন লাগার ঘটনার উদাহরণও কম নয়!
সাধারণ দৃষ্টিতেই দেখা যায়, বৈদ্যুতিক পোস্টগুলো নির্ভর করেই ইন্টারনেট
সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও ক্যাবল অপারেটর (ডিশ) প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের
ক্যাবলগুলোর মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে সেবা পৌঁছাচ্ছেন। আর তারাই ডেকে আনছেন
বিপদ। এসব প্রতিষ্ঠান পরবর্তী গ্রাহকরার কথা ভেবে এসব পোস্টে জড়ো করেছেন
অতিরিক্ত তারের প্যাঁচ। যেন পরবর্তীতে কেউ সংযোগ চাইলেই এখান থেকেই তার
টেনে সহজেই পৌঁছে দিতে পারেন। এমন অতিরিক্ত তারের কয়েলে ভরপুর হয়ে আছে
ট্রান্সফর্মারের পোস্টগুলো। কান্দিরপাড় নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী খায়রুম
সালেহীন সোহান জানান, দিন দিন এই তারের প্যাঁচ বাড়ছেই, যে যেভাবে পারছে
বৈদ্যুতিক খুঁটি ব্যবহার করে তার টানছে। এভাবে চলতে থাকলে নগরীর সৌন্দর্য্য
যেমন নষ্ট হচ্ছে- তেমনি বিপদেরও আশংকা রয়েছে।
এছাড়া এলোমেলোভাবে তার
টানার ফলে সৌন্দর্য হারাচ্ছে শহর। প্রতিটি রাস্তার উপরে মাকড়সার জালের মতো
ঝুলছে এই তার। যা দেখতে খুবই দৃষ্টিকটু।
বিশেষ করে ইন্টারনেট
সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলোতে অতিরিক্ত তার ঝুলিয়ে রেখে
ঝঞ্ঝাট তৈরি করছে। বিভিন্ন সময়ে ইন্টারনেট সংযোগ মেরামতের জন্য কোন ধরণের
নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই উঠে যাচ্ছে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে। অন্যদিকে রাস্তার
উপর দিয়ে মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে যেভাবে পারছে তার টেনে দিচ্ছে
নতুন সংযোগ। ইন্টারনেট সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান ফাইবার নেট এর সত্ত্বাধিকারী
ওমর ফারুক নাহিদ জানান, আমাদের কিছুই করার নেই। বৈদ্যুতিক খুঁটি ছাড়া তার
টানার মতো আলাদা কোন খুঁটিরও ব্যবস্থা নেই। যে কারণে আমরা বাধ্য হয়েই
বৈদ্যুতিক খুঁটি ব্যবহার করি। আর ইন্টারনেট সংযোগ মেরামতের সুবিধার জন্য
তার ‘কয়েল’ করে খুঁটিতে ঝুলিয়ে রাখতে হয়। তবে তার যদি মাটির নিচ দিয়ে নেয়ার
ব্যবস্থা করা হয় তাহলে এ ধরণের অপরিকল্পিত তার টানা আর হবে না।
সচেতন
নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, অন্যের কাছে সওয়ায়
হয়ে সেবা দিচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান সেবা দিচ্ছে। তবে যেহেতু ইন্টারনেট ও ডিশ
সুবিধা ও নাগরিক সেবা সেক্ষেত্রে ইন্টারনেট, ক্যাবল অপারেটর- বিদ্যুৎ বিভাগ
ও সিটি কর্পোরেশন এই ব্যাপারে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। এখন
এটি সময়ের দাবি। তবে এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশনের
উদাসীনতাই অনেক।
কুমিল্লা বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ
সানাউল্লাহ জানান, বৈদ্যুতিক খুঁটিতে যত্রতত্র ভাবে তার ঝুলিয়ে রাখা
নির্ঘাত বিপদজনক। তবে ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও ক্যাবল অপারেটররা
নিরুপায় হয়েই বিদ্যুৎ বিভাগ এবং সিটি কর্পোরেশনের বৈদ্যুতিক খুঁটি ব্যবহার
করছে। কিন্তু এসব তার টানার জন্য বৈদ্যুতিক তারের উপর দিয়ে অন্যান্য তার
যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এছাড়া তার টানার সময় যেন শতভাগ সুরক্ষার বিষয়টি
নিশ্চিত করে সে বিষয়কে বার বার বলা হয়েছে।
তবে যত দ্রুত সম্ভব এই তারগুলো মাটির নিচ দিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করার জন্য তিনি সিটি কর্পোরেশনের প্রতি আহ্বান জানান।
কুমিল্লা
সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ মনিরুল হক সাক্কু জানান, মাটির নিচ দিয়ে
ইন্টারনেট ক্যাবল ও ডিশ লাইনের তার নেয়ার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ডে যেসব নতুন ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে তার পাশাপাশি
মাটির নিচ দিয়ে তার টানার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ যেসব
জায়গায় অপরিকল্পিতভাবে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে অন্যান্য তার ঝুলানো আছে সেগুলো
অপসারণের ব্যবস্থা করা হবে।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ
বিভাগের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী খায়রুল বাশার এ প্রসঙ্গে জানান,
একটি খুঁটিতে বৈদুতিক তারের পাশাপাশি অন্যান্য তার এভাবে ঝুলিয়ে রাখা আসলেই
ঝুঁকিপূর্ণ তবে সিটি কর্পোরেশন মেয়র এ ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নিবেন আমরা
সেভাবে কাজ করব।