
ছাত্রলীগের
নেতাকর্মীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের
(বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ ছোটবেলা থেকেই ছিলেন অদম্য মেধাবী। কাসে
প্রথম ছাড়া কখনও দ্বিতীয় হননি। আবরার ২০১৫ সালে কুষ্টিয়া জেলা স্কুল থেকে
বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পরে নটর
ডেম কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। সেখান থেকে ২০১৭ সালে এইচএসসি
পরীক্ষায়ও গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর বাংলাদেশ প্রকৌশল
বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগে ২০১৭-১৮
শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন। বুয়েটের শেরে-বাংলা হলের ১০১১ নং কক্ষের আবাসিক
ছাত্র ছিলেন আবরার।
অষ্টম ও দশম শ্রেণিতেও বিশেষ বৃত্তি পেয়েছিলেন এই
মেধাবী শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায়
দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন। চান্স পেয়েছিলেন ঢাকা মেডিকেলেও।
পরিবারের
সদস্যরা চেয়েছিলেন আবরার মেডিকেলে ভর্তি হোক। কিন্তু আবরার মেডিকেলে ভর্তি
না হয়ে নিজ পছন্দে বুয়েটে ভর্তি হন। সেখানে ভর্তি হওয়ার পর অনেকটা পথ
পাড়িও দিয়েছেন তিনি।
আবরারের চাচা মিজানুর রহমান দাবি করেন, আবরার ফাহাদ
শিবিরের কর্মী বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এটা বানোয়াট, আবরার একজন
উদারমনা ও প্রগতিশীল ছেলে। আমরা গোটা পরিবার আওয়ামী লীগের সমর্থক। হানিফ
সাহেবের (আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ) সব
প্রোগ্রামে আমরা অ্যাটেন্ড করি। তবে আবরার তাবলিগে যেত। বুয়েটে ভর্তির পরও
দু-তিনবার সে তাবলিগে গিয়েছিল। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং পবিত্র কোরআন
শরিফ পড়ত।
ছেলের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি
জানিয়ে মা রোকেয়া খাতুন বলেন, রোববার সকালে আমি তাকে নিজে ঘুম থেকে ডেকে
তুলি। সে ঢাকায় রওনা দেয়। মাঝে তিন-চারবার ছেলের সঙ্গে আমার মুঠোফোনে কথা
হয়। বিকেল ৫টায় হলে পৌঁছে ছেলে আমাকে ফোন দেয়। এরপর আর কথা হয়নি। রাতে
অনেকবার ফোন দিয়েছিলাম, ও আর ফোন ধরেনি।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেন শোকে মুহ্যমান রোকেয়া খাতুন।
এদিকে
মঙ্গলবার নিজ গ্রাম কুমারখালীর রায়ডাঙ্গা গোরস্থানে ছেলেকে সমাহিত করার
সময় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ আবারও সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, তার
ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটা
পরিকল্পিত হত্যাকা-। যে ছেলেটা বিকেল ৫টায় ঢাকায় পৌঁছাল, তাকে ৮টার দিকে
নির্যাতন করার জন্য ডেকে নিয়ে গেল। ছয় ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালাল, এটা
অবশ্যই পরিকল্পিত।’
এদিকে আবরারের চাচা মিজানুর রহমান দাবি করেন, এ
হত্যাকা-ে ক্ষমতাসীন দলের বড় কোনো নেতার নির্দেশ থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘এ
ঘটনায় কোনো নেতার ইন্ধন রয়েছে। কেননা দু-একজন নয়, ১৫ জনেরও বেশি ছেলে
হত্যায় অংশ নিয়েছে। পূর্বপরিকল্পনা ছাড়া এতজন কাউকে মারতে পারে না।
হাইকমান্ডের নির্দেশেই এই হত্যাকা- হয়েছে।’
আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার
ফাইয়াজ জানান, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ভাইয়ার এক বন্ধু বুয়েট থেকে প্রথমে ফোন
দিয়ে বলেন, সে মারাত্মক অসুস্থ। কিছুক্ষণ পর আবার খবর পেলাম ভাইয়া মারা
গেছে। মারা যাওয়ার খবরে পুরো পরিবারের অবস্থা কী হতে পারে?
ফাইয়াজ বলেন,
‘ভাইয়ার সেমিস্টার পরীক্ষার কারণে বাসায় ছুটি না কাটিয়ে শনিবার সকাল সাড়ে
৯টায় কুষ্টিয়া থেকে বাসে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। বিকেল ৫টায় পৌঁছানোর পর
সে মোবাইল করে। এরপর থেকে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। পরে ভাইয়ার মোবাইলে
একাধিকবার কল দিলেও সে ধরেনি। পরে ভাইয়ার ম্যাসেঞ্জার অন থাকলেও সেখানে রিং
হলেও ভাইয়া ধরেনি। ফলে আমরা চিন্তিত হয়ে পড়ি। ফোন না ধরায় আমি ফেসবুকের
ম্যাসেঞ্জারে ভাইয়াকে নক করি। ভাইয়া সে সময়ও ফেসবুকে অ্যাকটিভ ছিল, তবে
সাড়া দেয়নি।’