পানি দূষণ: মরে যাচ্ছে ডাকাতিয়া নদীর মাছ
Published : Wednesday, 9 October, 2019 at 12:00 AM
ফারুক আহম্মদ: পানি দূষণের কারণে ডাকাতিয়া নদীর মাছ মরে যাচ্ছে। মঙ্গলবার রাত থেকে এটি শুরু হয়ে গতকাল সকাল থেকে তা প্রকট আকার ধারণ করে। এতে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন খাঁচায় চাষ হওয়া তেলাপিয়া মাছের খামারিরা। এমন পরিস্থিতিতে চরম আর্থিক ক্ষতি গুনতে হবে এমন দুই শতাধিক মাছের খামারিকে। শুধু তাই নয়, পানি দূষণের কারণে আতঙ্কে আছেন নদীপারের মানুষজনও। এদিকে, চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীতে খাঁচার তেলাপিয়া মাছের সঙ্কটে ২২ দিনের মা ইলিশ রক্ষায় মাছের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
চাঁদপুর শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ডাকাতিয়া নদী। গতকাল সকাল থেকে সেই নদীর বেশ কয়েক কিলোমিটার জুড়ে মাছ মরে ভেসে উঠছে। তার আগে গতরাতে এমন দৃশ্য দেখা গেলেও তা গুরুত্ব দিয়ে দেখেননি কেউ। বিশেষ করে চাঁদপুর-পুরানবাজার সেতু থেকে গাছতলা সেতু পর্যন্ত দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার নদীতে এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে। পানি দূষণের কারণে মরে ভেসে ওঠা নানা প্রজাতির মাছ শত শত মানুষ নদী থেকে তুলে নিয়েছেন। এতে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন এসব এলাকায় খাঁচায় চাষ হওয়া তেলাপিয়া মাছের দুই শতাধিক খামারি। আর্থিক ক্ষতি গুনতে গিয়ে তাদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। এতে দিশেহারা এসব মৎস্য খামারিরা।
নদীপারের রঘুনাথপুরের বাসিন্দা শামছু কাজী জানানন, গত ২০ বছরেও তার চোখে এমন দৃশ্য পড়েনি। তিনি বলেন, প্রায় ১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে খাঁচায় তেলাপিয়া মাছের চাষ করেছি। এখন সেই মাছ মরে তার সব শেষ। একই কথা জানালেন সোহেল মিজি, সাহেদ কাজী, কাউসার মিয়াসহ আরো কয়েকজন খামারি।
চাঁদপুরে খাঁচায় তেলাপিয়া মাছ চাষ সমিতির সভাপতি আলমগীর হোসেন মিয়াজী জানান, এমন ক্ষতির ফলে তেলাপিয়া চাষে বড় ধাক্কা খেতে হলো খামারিদের। কারণ, বেশির ভাগ খামারি ব্যাংক ঋণ এবং ধারদেনা করে মাছ চাষ করেছে।
শুধু তাই নয়, হঠাৎ করে পানি দূষণের কারণে নদীপারের বাসিন্দারাও আতঙ্কিত। ইচুলিঘাটের বাসিন্দা সাইফুল আলম জানালেন, পানি দূষণে তাদের মধ্যে নানা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
বুধবার দুপুরে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নদীর যেখানে পানি দূষণ, তার আশপাশে দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, বেশ কয়েকটি ইটভাটা রয়েছে। তার মধ্যে শহরের গুনরাজদী এলাকার বালুর মাঠে গড়ে ওঠা ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকিং বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের পৃথক দুটি ড্রেন দিয়ে ডাকাতিয়া নদীতে বর্জ্য পড়ছে। তবে এই থেকে দূষণের কারণ কি-না তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি সংশ্লিষ্ট মৎস্যবিজ্ঞানী।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকী জানান, দিনভর নদীর পানি পরীক্ষা শেষে প্রাথমিকভাবে দূষণের প্রাথমিক কারণ খুঁজে পেয়েছেন তিনি। এতে পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেড়ে গেছে এবং অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে নানা প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণীর জীবন ধারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
কেন এমন দূষণ হলো- তা খতিয়ে দেখার জন্য চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নদীকেন্দ্রকে পাঠানো হয়েছে। এই কেন্দ্রের প্রধান ড. আনিছুর রহমান জানান, পানির নমুনা পরীক্ষায় প্রাথমিক ফলাফল হচ্ছে- ডাকাতিয়ায় নাব্যতা সঙ্কট, স্রোত সৃষ্টি না হওয়ায় কচুরিপানা আটকে থাকে। ফলে পানির গুণগতমান নষ্ট হয়ে যায়। এর প্রভাবে খাঁচার মাছসহ উন্মুক্ত জলাশয়ের অন্যান্য মাছের জীবন ধারণে বাধা পড়ে। যে কারণে, মাছের মড়ক হতে পারে। তবে আরো বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। তখন হয়তো আরো কিছু কারণ জানা যাবে।
এদিকে, নদীতে মরে ভেসে ওঠা তেলাপিয়াসহ নানা প্রজাতির মাছের জন্য শত শত মানুষ নদীপারের ভিড় করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ সরাসরি নদী থেকে মাছ তুলে নিয়েছেন। আবার অনেকেই নামমাত্র মূল্যে এসব মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে, কাল থেকে পরবর্তী ২২ দিনের জন্য মা ইলিশ রক্ষায় নদনদীতে সবধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এই ২২ দিনে চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীতে চাষ হওয়া খাঁচার তেলাপিয়া মাছ বাজারে ভোক্তার চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। কিন্তু সেই মাছও মরে যাবার ফলে মাছের চাহিদা পূরণে বড় একটা সঙ্কট সৃষ্টি হলো।