
বিশেষ
প্রতিবেদক: এক মেয়ে ডাক্তার আরেক মেয়ে পড়ে মাস্টার্সে। একমাত্র ছেলে আদিল
এবার পেরুলো মাধ্যমিকের গন্ডি। অনেক স্বপ্ন ছিল ছেলেকেও উচ্চ শিক্ষায়
শিক্ষিত করবেন বাবা আব্দুস ছাত্তার। চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে
কুমিল্লা মর্ডাণ স্কুল থেকে বাণিজ্য বিভাগে ৩.৫০ পেয়ে মাধ্যমিকের গন্ডি
অতিক্রম করে আদিল। কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য অনলাইনে ফরমও সংগ্রহ করে সে।
বিধিবাম!
কিশোর গ্যাং গ্রুপ নামে ঘাতকদের ধারালো অস্ত্রের বাঁধা অতিক্রম করে কলেজে
পৌঁছাতে পারেনি আদিল। সোমবার রাত ৯টায় মোটরসাইকেল চালানোর সময় কিশোর গ্যাং
‘ঈগল গ্রুপ’ এর সাথে বাক বিতন্ডার এক পর্যায়ে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাতে কলেজে
যাওয়ার পরিবর্তে না ফেরার দেশে পাড়ি জমায় আদিল। আর আদিল এর মৃত্যুর মধ্য
দিয়ে কুমিল্লায় গ্যাং গ্রুপের সংঘাতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দ্ইু
জনে।
নিহত আজমাইন আদিল কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মহিচাইল ইউনিয়নের
১নং ওয়ার্ড মহিচাইল গ্রামের বাসিন্দা কুমিল্লা জর্জ কোটের পেশকার আব্দুস
ছাত্তারের একমাত্র ছেলে। তার মৃত্যুতে চান্দিনা উপজেলা জুড়ে শোকের ছায়া
নেমে এসেছে। ‘গ্যাং গ্রুপ’ নামে এসব গ্রুপের অবসানের দাবী জানিয়েছেন
চান্দিনাবাসী।
মঙ্গলবার দুপুরে চান্দিনা উপজেলার মহিচাইল গ্রামের নিজ
বাড়িতে আদিলের মরদেহ পৌঁছলে আত্মীয়-স্বজন, শোভাকাঙ্খি ও উৎসুক জনতার ভীড়
জমে আদিলের বাড়িতে। কুমিল্লায় জন্ম, কুমিল্লা শহরেই বেড়ে উঠার কারণে এলাকার
লোকজন তাকে তেমন না চিনলেও, এলাকার সুপরিচিত মুখ এড. আবুল কাশেম এর ভাতিজা
এবং ওই পরিবারের সর্ব কনিষ্ট সন্তান নিহত হয়েছে কিশোর অপরাধি গ্রুপ ‘গ্যাং
গ্রুপের’ হাতে এমন খবরে এলাকার লোকজনও ছুটে আসে ওই বাড়িতে।
নিহতের
মরদেহ বাড়িতে পৌঁছার পর বারবার মুর্ছা যাচ্ছে পরিবারের সদস্যরা। প্রায়
নব্বই উর্ধ্ব দাদীর সর্ব কনিষ্ট নাদির অকাল মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর আর্তনাদে
যেন পুরো এলাকা ভারি হয়ে উঠছিল। শোকে পাথর হয়ে যায় মা।
সকলের
অশ্রুসিক্ত নয়নে কাউকে কিছু না বলে মহিচাইল (ছেঙ্গাগাছিয়া) জামে মসজিদ
সংলগ্ন মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত হয় আদিল।
মামলা হয়নি:
সদ্য
এসএসসি পাশ আজনাইন আদিল নিহতের ঘটনায় কোন মামলা হয়নি। ঘটনার পর ২৪ ঘন্টা
পেরিয়ে গেলেও এ পর্যন্ত হত্যাকারীর সন্ধান পায়নি পুলিশ। ঘটনার পর দ্ইু
প্রত্যক্ষদর্শীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।
এদিকে একমাত্র
সন্তান হারিয়ে দিশেহারা নিহতের বাবা জর্জকোটের সাবেক নাজির আব্দুস
সাত্তার। গতকাল লাশ ঘরের সামনে দিনের ১১টায় মেয়ে ফাতেমা আফরিনকে সাতে নিয়ে
বসে শুধু কাঁদছেন। দুচোখ বেয়ে অজোরে পানি পড়ছে। এসময় লাশ ঘরের সামনে
শোকাতুর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এদিকে বোনের কান্না যেন কিছুতেই থামছে না।
একমাত্র ভাইকে হারিয়ে বোন ও অজোরে কাদছেন। দুচোখে পানি আর পানি। চাপা
ক্ষোভে কিছুক্ষন পর পর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছেন।
রাত ১১টায় নিহতের বাবাকে
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান তিনি এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারবেন
না। আগামীকাল বিস্তারিত বলবেন। পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে কথা বলতে চাইলে
তিনি বলেন আগামী কাল বলা হবে।
এ বিষয়ে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা মো: আবু ছালাম মিয়া জানান, আজনাইন আদিল নিহতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত
থানায় কোন মামলা হয়নি। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে
এই মুহুর্তে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া যাচ্ছেনা।