
‘বাঙালির জয়, কবিতার জয়’ - শ্লোগান নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণের হাকিম চত্বরে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী জাতীয় কবিতা উৎসব-২০১৯। ১৯৮৭ সাল থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবের এবার ৩৩তম আসর।
শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকালে কবিতা পরিষদের আয়োজনে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন কবি আসাদ চৌধুরী। সংগঠনটির সভাপতি মুহাম্মদ সামাদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত, আহ্বায়ক রবিউল হুসাইন। উৎসবের ঘোষণাপত্র পড়েন রুবী রহমান এবং শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন আমিনুর রহমান সুলতান।
উৎসব শুরু করার আগে সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানান কবিরা। পরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও শিল্পী পটুয়া কামরুল হাসানের সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর পর শুরু হয় কবিতা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। উৎসবের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য রুবী রহমান। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হয় আলোচনা পর্ব।
উদ্বোধনী বক্তব্যে আসাদ চৌধুরী বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পশ্চিমা গণতন্ত্রের আশঙ্কায় সতর্ক করে বলেছিলেন, একটা সমাজে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর লোভকে যখন অপরিমিত মাত্রায় বাড়তে দেওয়া হয় এবং অন্যের দ্বারা তা প্রবুদ্ধ হয়ে থাকে, তখন পশ্চিমের দেশে যাকে গণতন্ত্র বলে তা রূপায়ণ আর সম্ভব হয় না। এ রকম পরিস্থিতিতে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে অবিরাম সংগ্রাম চলতে থাকে আপন আকাঙ্ক্ষা পূরণ আর স্বার্থসিদ্ধির জন্য তারা সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দখল করতে চায়। গণতন্ত্রের তখন একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়ায় ধনীদের আনন্দবিহারের হস্তিবাহক হয়ে ওঠা।
কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত তারিক সুজাত বলেন, একজন কবি-লেখকের প্রধান দায়িত্ব তার সৃজনশীল ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা। আর সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সেই সৃষ্টিকর্ম নিজ দেশ ও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া। আজ পর্যন্ত আমাদের দেশের লেখকদের সেরা সাহিত্যকর্মগুলো নিয়ে কোনো রাইট ক্যাটালগ তৈরি করে আন্তর্জাতিক কোনো বইমেলায় নিয়ে যাওয়া হয়নি। তাহলে মাতৃভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়া জাতির সাহিত্যকর্ম বিশ্বের সংযোগ ঘটানোর দায়িত্ব কে নেবে।
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ সামাদ বলেন, আগামী বছর থেকে পয়লা ফেব্রুয়ারি সরকারিভাবে জাতীয় কবিতা দিবস হিসেবে পালন করা হবে। এ জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এই আহ্বান পৌঁছে দেওয়া হবে। জাতীয় কবিতা উৎসব সমসাময়িক কালকে ধারণ করে কণ্ঠে তুলে নেয় তার মর্মবার্তা। এবারের উৎসবের মর্মবার্তা ‘বাঙালির জয়, কবিতার জয়’।
কবিতা উৎসবে বিদেশি কবিদের মধ্যে যোগ দিয়েছে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে সেমন্তী ঘোষ, সুমন গুণ, দিলীপ দাস, মৃণাল দেবনাথ, বিমলেন্দ্র চক্রবর্তী, শোভা দেববর্মণ, দীপক হালদার, বিধানান্দ পুরকায়স্থ। তুরস্ক থেকে এসেছেন তারিক গুনারসেল, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্লারি বুকার, চীনের তানজিয়ান চাই, শ্রীলঙ্কার জয়শঙ্কর সুব্রামানিয়াম, ইরাকের আলী আল সালাহ, মালয়েশিয়া মালিম ঘোজালি, স্পেনের জুলিও পাভানেত্তি, উরুগুয়ের অ্যানাবেল ভিলার, কঙ্গোর কামা কামান্দা ও নেপালের পুষ্প কাহনাল।
উৎসবে স্প্যানিশ ভাষায় কবিতা পড়েন কামা কামান্দা, একই ভাষায় নারীদের উৎসর্গ করে কবিতা পড়েন নারী কবি অ্যনাবেল ভিলার। শুক্রবার দিনব্যাপী এ উৎসবে চলছে মুক্ত আলোচনা ও কবিতাপাঠ। শনিবার সকাল থেকে দিনব্যাপী থাকবে সেমিনার ও কবিতাপাঠের আয়োজন।